‘রংপুরের পরিবহন ধর্মঘটে কুড়িগ্রাম মালিক সমিতির একাত্মতা নেই’

শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) সকাল থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটে কুড়িগ্রাম মোটর মালিক সমিতির একাত্মতা নেই বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রাম মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. লুৎফর রহমান বকসি। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) রাতে ঢাকাপ্রকাশ-কে তিনি আরও জানান, আমরা কোনও ধর্মঘটের আহ্বান করিনি।
লুৎফর রহমান বকসি জানান, আমাদের পক্ষ থেকে ধর্মঘটের সমর্থনে কোনও নির্দেশনা নেই। তবে রংপুরের ডাকা ধর্মঘটে আমাদের জেলার মোটর মালিকরা গাড়ি চালাবেন কিনা সেই সিদ্ধান্ত তাদের (মালিকদের)। গাড়িগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন। আমরা বলে দিয়েছি, যারা গাড়ি চালাতে চাইবেন তারা চাইলে গাড়ি চালাতে পারবেন। আমাদের এখান থেকে কোনও প্রতিবন্ধকতা নেই। তবে সেক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব তারা নিজেরা বহন করবেন।
মোটর মালিক সমিতির এই নেতা আরও জানান, আমরা ভৌগলিক কারণে শেষ প্রান্তের জেলা হওয়ায় আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে।
এ সময় জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকা পরিবহন ধর্মঘটের কারণ হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলায় ‘প্রশাসনিক হয়রানির’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে লুৎফর রহমান জানান, গত বুধবার কুড়িগ্রামের ত্রিমোহনীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কিছু মিনি বাসে জরিমানা করা হয়েছিল। এটা হয়রানি বলা হয়েছে বলে জেনেছি।
মোবাইল কোর্টে জরিমানার সমালোচনা করে তিনি আরও জানান, হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে সড়ক-মহাসড়কে অনেক অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। কিন্তু মোবাইল কোর্ট বসলে সেই সব অবৈধ যানবাহনের কোনও জরিমানা হচ্ছে না। অথচ সেসব যান তাদের সামনে দিয়েই চলাচল করে।
লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমাদের গাড়ি তো অবৈধ নয়। কোনও গাড়ির কাগজপত্রের মেয়াদ কয়েকদিনের ফেইল থাকলেই মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা গুনতে হয়। বিষয়গুলো প্রশাসনের বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুড়িগ্রাম মোটর মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ‘ রংপুরের ডাকা ধর্মঘটে আমাদের কিংবা লালমনিরহাটের কোনও সমর্থন নেই। এটা রাঙ্গা সাহেব একক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
রংপুর মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে কুড়িগ্রাম থেকে পরিবহন চলাচল করবে কিনা-এমন প্রশ্নে মালিক সমিতির এই নেতা বলেন, ‘ আমরা রংপুরে গাড়ি পাঠালেই সেগুলো তারা আটকে দিচ্ছেন। এখনও (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা) রংপুরে আমাদের ৯টি গাড়ি আটকানো আছে। এ অবস্থায় আমরা গাড়ি চালাব কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছি।’
এদিকে রংপুর মালিক সমিতির উল্লেখ করা ‘জেলা প্রশাসনের হয়রানি’ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘বিআরটিএ‘র চাহিদা অনুযায়ী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। প্রসিকিউশনের অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগভাবে মোবাইল কোর্টে জরিমানা করা হয়। আমরা যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে আইনের মধ্যে থেকে কাজ করে থাকি। এখানে হয়রানির বিষয়টি সঠিক নয়।’
মোবাইল কোর্টের সামনে দিয়ে অবৈধ যানবাহন চলাচল করলেও সেগুলোর বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না- মোটর মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এমন অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। পরবর্তীতে তারা যেন বিষয়গুলো খেয়াল রাখে।’
অন্যদিকে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নসিমন, করিমনসহ লাইসেন্সবিহীন অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও কুড়িগ্রামে প্রশাসনিক হয়রানির প্রতিবাদে শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত রংপুরের সব রুটে বাস, ট্রাক, মিনিবাস ও মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে শনিবার (২৯ অক্টোবর) রংপুরে বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে মনে করছে দলটির নেতা-কর্মীরা।
এসআইএইচ
