চার বছরেও মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব নেই রংপুর বিএসটিআইয়ে
রংপুর বিভাগের তিনটি স্থল-বন্দরসহ আট জেলার উৎপাদিত পণ্যের গুণগত মান নির্ণয়ের জন্য ২০১৯ সালে বিএসটিআইয়ের বিভাগীয় কার্যালয় চালু করা হয়। এ কার্যালয় চালুর চার বছরেও এখানে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব স্থাপন করা হয়নি। ফলে পণ্যের গুণগত মান নির্ণয়ের এক মাত্র ভরসা করতে হচ্ছে ঢাকা থেকে। এই দপ্তরে জনবল সংকট থাকায় মাঠ পর্যায়ে কাজ করতেও হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সুযোগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ও পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াই নিম্নমানের পণ্য উৎপাদন করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
রংপুর বিভাগীয় বিএসটিআইয়ের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে চালু হওয়া এ কার্যালয়ের মাত্র ২০টি খাদ্যপণ্যের পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। কর্মকর্তা রয়েছেন ১০ জন। মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব না থাকায় ফ্রুট জুস, জ্যাম, জেলি, সস, ড্রিংকিং ওয়াটার, পাউডারসহ অধিকাংশ খাদ্যপণ্যের মান পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় জনবল না থাকায় মোবাইল কোর্ট, সার্ভিল্যান্স কার্যক্রম মাঠ পর্যায়ে চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চারজন পরিদর্শক থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। দপ্তরে নেই নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেট।এ কারণে ভ্রাম্যমাণ অভিযান নিয়মিত পরিচালিত হয় না। মাঝে মধ্যে কোনো অভিযান পরিচালনা করা হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে ফ্রুট জুস, জ্যাম, জেলি, সস, ড্রিংকিং ওয়াটার,পাউডারসহ গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
বিএসটিআই সূত্র জানায়, গত ১৪ মাসে এ কার্যালয় থেকে সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স প্রদান করা হয়েছে ৩৮৩টি, সার্টিফিকেশন মার্কস (সিএম) লাইসেন্স নবায়ন করা হয়েছে ৩৪০টি, ১২৮টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মামলা করা হয়েছে ১৫৮টি, ১৫৫টি সার্ভিল্যান্স কার্যাক্রম পরিচালনা করে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে ৪টি। আমদানি করা পণ্যের ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছে ২৭টি, আমদানি করা পণ্যের ছাড়পত্র প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে একটি ও পণ্যের মোড়কজাত নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে ১৭৬টি পণ্যের।
বিএসটিআইয়ের সেবা প্রত্যাশীরা বলছেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও হিলি স্থলবন্দরে বিএসটিআইয়ের কার্যালয় স্থাপন এবং দিনাজপুরে আঞ্চলিক অফিস বাস্তবায়ন হলে সেবা গ্রহীতারা খুব দ্রুত সেবা গ্রহণ করতে পারবেন সেই সঙ্গে সাশ্রয় হবে অর্থ ও সময়।
রংপুর নগরীর ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন বলেন, আমার দোকানে রংপুরে উৎপাদিত শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। কিছু পণ্যের প্যাকেটের গায়ে বিএসটিআই অনুমোদিত লেখা রয়েছে। এ পণ্যের মান নিয়ে ভোক্তাদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে অভিযোগ করে থাকেন। কখনো কখনো ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন দোকানে ওইসব পণ্য রাখায় জরিমানা করা হয়েছে।
রংপুরের কয়েক জন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বলেন, বিএসটিআইয়ের কার্যালয়ে মাইক্রো বায়োলজিক্যাল ল্যাব না থাকায় আমাদের ঢাকায় স্যাম্পল পাঠাতে হয়। বুড়িমাড়ী স্থলবন্দর থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে রংপুর বিএসটিআইয়ের কার্যালয়, সেখান থেকে স্যাম্পল পরীক্ষা ও রিপোর্ট পেতে ১৫-২০ দিন সময় লেগে যায়। অনেক সময় সার্ভার ডাউন হলে বেশি সময় লাগে।
রংপুরে জেলা শাখা সুজনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরব হোসেন বালেন, খাদ্যদ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের কাজটি মূলত বিএসটিআই করে থাকে। ভোক্তারা যেন প্রতারিত না হন এবং সঠিক জিনিসটি ক্রয় করতে পারেন, সেজন্যই মান পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনীয় পণ্যের প্রকৃত সংখ্যা বাজারে অনেক। বাধ্যতামূলক মান সনদের আওতায় থাকা পণ্যের ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে দেখা যায়, বিএসটিআই থেকে মান ঠিক করে নিলেও উৎপাদনের সময় তা ঠিকমতো অনুসরণ করা হয় না। তাই কঠোর নজরদারি করতে হবে। বিএসটিআইয়ের কার্যালয় থেকে যে পণ্যগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয় দীর্ঘ দিন পর তার পরীক্ষা হয়ে থাকে ফলে সঠিক রিপোর্ট আসে না।
রংপুর অফিসের বিভাগীয় বিএসটিআইয়ের প্রধান ও উপপরিচালক (মেট্রোলজি) মফিজ উদ্দিন আহমাদ বলেন, বিভাগীয় কার্যালয় হলেও এখানে এখনো মাইক্রো বায়োলজিকেল ল্যাব স্থাপন করা হয়নি। এ কারণে আমরা অনেক পরীক্ষা এখানে করতে পারছি না। পণ্যের মান নির্ণয়ের জন্য ঢাকায় স্যাম্পল পাঠাতে হয়। যা দীর্ঘ সময়ের কাজ। আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় জনবল সংকট রয়েছে। রংপুর বিভাগের ৮ জেলার জন্য মাত্র একজন পরিদর্শক রয়েছেন। দিনাজপুরে আঞ্চলিক অফিস হওয়ার কথা রয়েছে। তা বাস্তবায়ন হলে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুরের মানুষ খুব দ্রুত সেবা পাবেন।
এসএন