তফসিল ঘোষণার আগেই রংপুরে নির্বাচনী সাজ-সাজ রব
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচনকে ঘিরে চলছে সাজ-সাজ রব। নগরীর সড়ক-পথঘাটে নির্বাচনী গেট, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে উপস্থাপন করে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কমপক্ষে হাফ ডজন নেতা। দলীয় মনোনয়ন বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণে নিচ্ছেন নানা উদ্যোগ। ঘরে চুপ করে বসে নেই বিএনপি নেতারাও। তাদের প্রচারণায় সরব রয়েছেন জেলা ও মহানগরের কয়েকজন প্রার্থী। নির্বাচনী প্রচারণায় জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হয়ে পুনরায় নির্বাচিত হতে দলকে সুসংগঠিত করছেন নির্বাচনী মাঠ। রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার প্রায় এক মাস আগে শুক্রবার নগরী ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এই চিত্র দেখলে মনে হয় সপ্তাহ পেরুলেই নির্বাচন।
রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের সপ্তম এই সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন হয় গত ২০১৭ সালের ২১ ডিসেম্বর। নির্বাচিতদের প্রথম সভা হয় ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। এই হিসেব অনুযায়ী গত ১৯ আগস্ট থেকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়। সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিতদের মেয়াদ ধরা হয় প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। বর্তমান পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এই হিসেবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী। এ লক্ষ্যে নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্ততির কাজ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন।
রংপুর নগরী ঘুরে দেখা গেছে, সিটি নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্থানীয় লোকজনের সেবার মাধ্যমে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। হাট-বাজার ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন তারা। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখাসহ পরিকল্পিত নগরায়নের উপর গুরুত্ব দিচ্ছেন সচেতন নাগরিকরা।
এদিকে এই সিটিতে এখনো গঠন করা হয়নি রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। রাস্তাঘাটসহ চোখে পড়ার মতো বেশ কিছু উন্নয়ন হলেও মাস্টারপ্লান অনুমোদনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়গুলোর সমাধান হয়নি। মূলত আগামী নির্বাচনে এগুলো ইস্যু হয়ে উঠবে।
জানা গেছে, রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের প্রায় এক ডজন নেতা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ছয়জন, জাতীয় পার্টির একজন, বিএনপির তিনজন ছাড়াও জাসদ, বাসদ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফাকে একক প্রার্থী হিসেবে দাবি করছেন জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতারা।
আওয়ামী লীগ থেকে মাঠে প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আছেন দলটির রংপুর মহানগরের সভাপতি সফিয়ার রহমান সফি, সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আতাউর জামান বাবু, রংপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রমিক লীগ নেতা এম এ মজিদ। এসব প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন চেয়ে নগরীর সড়কে ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন ও স্টিকার লাগিয়েছেন। পাড়া-মহল্লাতে সভা-সমাবেশ করছেন।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতারা বর্তমান সরকার ও ইসির অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিলেও রংপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের দলের দুই-একজন নেতা প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, সাবেক সহ-সভাপতি কাওছার জামান বাবলা, সাবেক সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মিজু ও জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক, নারী নেত্রী সুইটি আনজুম, ব্যবসায়ী মেহেদী হাসান বনির নাম শোনা যাচ্ছে।
রংপুরের নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলেছেন, এই সিটি নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে। বিএনপি এবারের নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নাও নিতে পারে। তারা বলছেন, বিগত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি পেয়েছিল ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯, নৌকা প্রতীক পেয়েছিল ৬২ হাজার ৪০০, ধানের শীষ পেয়েছিল ৩৫ হাজার ১৩৬ এবং ইসলামী আন্দোলন পেয়েছিল ২৪ হাজার ৬ ভোট। এই নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের উপর নির্ভর করছে নির্বাচনী মাঠের প্রতিদ্বন্দ্বিতার উপর।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি বলেন, তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। সব সময় দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সরকারের ভিশন মিশন বাস্তবায়নে কাজ করে গেছেন। রংপুরের উন্নয়ন, সম্ভাবনা ও সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর সভাপতি বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তাফিজার রহমান বলেন, গত পৌনে পাঁচ বছরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। করোনা মহামারির মধ্যেও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড এবং জনসেবা বন্ধ ছিল না। এই নগরকে পরিকল্পিত ও গোছালো হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। পাঁচ বছরে সবকিছু পরিবর্তন হবে না। এর জন্য সময় লাগবে। আমার বিশ্বাস আসন্ন সিটি নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম শাহাতাব উদ্দিন বলেন, নভেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে। এ লক্ষে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলছে। এই সিটিতে ইভিএমে ভোট গ্রহণে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। আগামী ডিসেম্বরের শেষ দিকে এ নির্বাচন করার পরিকল্পনা রয়েছে ।
প্রসঙ্গত, রংপুর পৌরসভা থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠন হয় ২০১২ সালের ২৮ জুন। প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ওই বছরের ২০ ডিসেম্বরে। প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন সরফুদ্দিন আহমেদ ঝণ্টু। বর্তমানে এই সিটির জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। ভোটার রয়েছে চার লাখের বেশি। ২০১৭ সালে দ্বিতীয় নির্বাচনের সময় ভোটার ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৪ জন।
এসআইএইচ