কুড়িগ্রামে প্রশ্নপত্র ফাঁসের রিমান্ড আসামি পলাতক
কুড়িগ্রামের প্রশ্নপত্র ফাঁসের মামলায় প্রধান আসামি ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানকে ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে সকল আসামীর জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন আদালত।
বৃহস্পতিবার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন আলী রাষ্ট্র ও আসামী পক্ষে শুনানী শেষে এ আদেশ দেন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আজাহার আলী নতুন করে আসামী আমিনুর রহমান রাসেল ও জোবায়ের হোসেনের ৩দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক আগামী ২অক্টোবর (রবিবার) শুনানীর দিন ধার্য্য করেন।
এর আগে বিচারক তদন্তকারী কর্মকর্তার আদালতে উপস্থিত হতে বিলম্ব হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ভবিষ্যতে যেন এরকম না হয় সে ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক হতে বলেন। অপর দিকে এজাহার নামীয় পলাতক আসামী আবু হানিফ সীমান্তবর্তী এলাকায় বাড়ি হওয়ায় সে ভারতে পালিয়ে গেছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় কুড়িগ্রামের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ভূরুঙ্গামারী আমলী আদালতের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুমন আলি এজলাসে বসেন। আদালতে আসামিদের জামিন ও রিমান্ডের শুনানির জন্য আইনজীবীরা হাজির হলেও অনুপস্থিত ছিলেন এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর আজাহার আলী। কোর্ট ইন্সপেক্টর মামুনুর রশিদ তিন দফায় ১০মিনিট করে সময় আবেদন করেন। তারপরও যথা সময়ে রিমান্ড আবেদনকারী এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপস্থিত হতে না পারায় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,'কোর্ট কি কারো জন্য অপেক্ষা করবে। না কি উনি কোর্টের জন্য অপেক্ষা করবেন। সময় জ্ঞান তার নেই। তাঁকে কি এখন ডেকে আনতে হবে? কোর্টের ইমেজ নষ্ট করা হচ্ছে। এতে আপনাদের ইমেজ থাকে কোথায়।' এ সময় আদালতে উপস্থিত সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর দিলরুবা আহমেদ শিখা ও কার্তিক চন্দ্র দাস পুনরায় আদালতের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে সময় প্রার্থনা করেন। এক পর্যায়ে সকাল ১০টা ৪০মিনিটে আদালত কিছু সময়ের জন্য মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
এর পরপরই ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি (তদন্ত) এবং এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আজাহার আলী আদালতে উপস্থিত হয়ে যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে আদালতে উপস্থিত হতে তার বিলম্ব হবার জন্য তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে ১০টা ৫৫ মিনিটে আদালত আবারও বসে। পুলিশসহ সকল পক্ষকে আদালতের সময়ের ব্যাপারে সতর্ক করেন।
এরপর রিমান্ড ও জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ ১৫মিনিট উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে আদালত সকল আসামীর জামিন নামঞ্জুর করেন এবং ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানকে ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ পর্যায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা এ মামলায় নতুন করে আরও দুজন আসামীর তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তারা হলেন,ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক জোবায়ের হোসেন। আদালত এ দু’জনের রিমান্ড শুনানীর জন্য আগামী রবিবার (২ অক্টোবর) দিন ধার্য্য করে আদেশ দেন।
ভূরুঙ্গামারী থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) আজাহার আলী বলেন,গত ২২ সেপ্টেম্বর মামলার মূল হোতা প্রধানশিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমানের ৩দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে আসামী পক্ষ আসামীদের জামিন আবেদন করেন। বিচারক জামিন এবং রিমান্ড শুনানীর জন্য বৃহস্পতিবার (২৯/০৯/২২) দিন ধার্য্য করে। শুনানি শেষে লুৎফর রহমানের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই ঘটনার সাথে আরও কারা জড়িত রয়েছেন তাদের তথ্য উদঘাটন করে আইনের আওতায় আনা হবে। উৎঘাটন করা সম্ভব হবে প্রশ্ন ফাঁসের সিন্ডিকেট। একই কারণে নতুন করে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং ইসলাম শিক্ষা শিক্ষক জোবায়ের হোসেনের ৩দিনের রিমান্ড আবেদন করলে বিচারক আগামী ২অক্টোবর শুনানীর দিন ধার্য্য করেন। মামলার এজাহার ভুক্ত নামীয় আসামী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক আবু হানিফ পলাতক রয়েছে। তাকে ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারি পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট দিলরুবা আহমেদ শিখা বলেন, আসামীরা প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটিয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি সাধন করেছেন। এই ঘটনার নেপথ্যে যারা সম্পৃক্ত রয়েছেন তাদের খুঁজে বের করতে আটককৃতদের রিমান্ডের প্রয়োজন ছিলো। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন, এটিএম এনামুল হক চৌধুরী চাঁদ, মনোয়ারুল হক সরকার আলো, আমির উদ্দিনসহ ১০জন আইনজীবী। তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আমির উদ্দিন জানান, বিজ্ঞ আদালতের কাছে আসামীদের জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন না-মঞ্জুর করেন। আদালত লুৎফর রহমানের ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আমরা রিমান্ডের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করি। আমরা আশা করি পুলিশ রিমান্ডের সময় তা অনুসরণ করবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন,মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিপ্তরের রংপুর অ লের পরিচালক আব্দুল মতিন ও উপ-পরিচালক আখতারুজ্জামান এর নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি বুধবার রাতেই তদন্ত কার্যক্রম শেষে ফিরে গেছেন। এ কমিটির তদন্তের মুল বিষয় বস্তু হলো প্রশ্ন ফাঁসের সাথে শিক্ষা বিভাগের লোকজনের সম্পৃক্ততা, দুর্বলতা, অবহেলা বা গাফিলতি আছে কিনা এবং কার দায় কি পরিমান তা সনাক্ত করা। একই সঙ্গে দূর্বলতা গুলো দূর করতে সুপারিশমালা তৈরী করা।
বৃহস্পতিবার দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোঃ কামরুল ইসলাম জানান,গত ২২ সেপ্টেম্বর ১ম দফা দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় গঠিত তিন সদদ্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। এ কমিটির আহŸায়ক দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ফারাজ উদ্দিন তালুকদার। তদন্ত টিমের অন্য সদস্যরা হলেন,উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উমা) প্রফেসর হারুন অর রশিদ মন্ডল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর অ লের উপ-পরিচালক আকতারুজ্জামান।
কুড়িগ্রামে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পলাতকসহ ৭জন জড়িত বলে তদন্ত কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দাখিল করবে বলে জানান। এছাড়াও তিনি আরও জানান, বোর্ড কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেছে। আগামী সপ্তাহের রবিবার অথবা সোমবার লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তদন্ত কার্যক্রমে পলাতক ১ জনসহ মোট ৭ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত। এর মধ্যে ৬জনকে ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করেছে। অপর একজন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেছে বলে জানা গেছে বিভিন্ন সূত্রে।
গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন হলেন,কুড়িগ্রামের নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান, ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের শিক্ষক জোবাইর রহমান, কৃষি বিজ্ঞানের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম, বাংলা শিক্ষক সোহের চৌধুরী ও পিয়ন সুজন মিয়া। এই ঘটনার পর ওই বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আবু হানিফ(৪৮) পলাতক আছেন। সে নাগেশ্বরী রামখানা ইউনিয়নের পূর্ব রামখানা গ্রামের বাসিন্দা মৃত: বাহার আলী পুত্র। এদের সবাইকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি।
এএজেড