দু-বেলা খাবারের জন্য বেদে সম্প্রদায়ের সংগ্রাম
দু-বেলা খাবারের জন্য সংগ্রাম করে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে বেদে সম্প্রদায়রা। তারা কিভাবে জীবনযাপন করছে, বাস্তবে না দেখলে বোঝার উপায় নেই। বেশির ভাগ বেদে সম্প্রদায়ের পরিবার গুলি দেশের বিভিন্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিছে তাবু টাঙগিয়ে দিনের পর দিন পার করছে। তারা কি খেয়ে বেঁচে আছে এবং কিভাবে জীবনযাপন করছে এতটুকু খোঁজ-খবর নেওয়ার মতো এ জগতে কেউ নেই বলে জানান বেদে সম্প্রদায়ের সদ্দার হান্নান মিয়া (৫৫), আনোয়ার হোসেন (৬০), গোলাম হোসেন (৪২)। তারা সবাই নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা থেকে এসেছে। গত এক সপ্তাহ আগে ১৪টি পরিবার কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের চন্দ্রখানা এলাকার ফুলবাড়ী অদর্শ স্কুলের দক্ষিণ পার্শ্বে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাংগিয়ে বসবাস শুরু করে।
মূলত সাপ ধরা ও সাপের খেলা বেদে সম্প্রদায়ের প্রধান পেশা। তবে তারা এখন সাপের খেলা দেখান না। সাপের খেলা দেখানোর পরিবর্তিতে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ময়না পাখির খেলা দেখানো, দাঁতের পোকা বের করানো, সিংয়া বিশ বের করা,মাছের হাঁড় বিক্রি ও তাবিশ কবোজসহ বাথ ব্যথার তাবিশ বিক্রি করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকে তারা। তবে এখনকার যুগে মানুষ আর আগের মতো,পাখির দাতের পোকা বের করাসহ ঝাঁড় ফুক ও তাবিশ কোবজের প্রতি মানুষের বিশ্বাস উঠে গেছে। তার পরেও তারা বাপ-দাদার পেশা যুগের পর যুগ ধরে আছে।
রবিবার দুপুরে বেদে সম্প্রদায়ের বসবাস স্থলে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের এই করুন চিত্র। দু-মুঠো খাবারের জন্য তাদের কেউ কেউ চলে গেছে গ্রামের নির্ভৃত পল্লীতে ময়না পাখির খেলা, দাতের পোকা বের করা ঝাড় ফুকসহ তাবিশ-কোবশ বিক্রির জন্য বেড়িয়েছেন। তবে সাত থেকে আট জন শিশু তাবুর পাশে খেলছে। তারা সকলেই জানায়, ভালো নেই, আমরা গরীব ঘরের সন্তান, ঠিক মতো দু-বেলা খেতে পারি না, আমাদের বাবা-মা- গ্রামে গ্রামে সারাদিন ঘুরে ২০০ টাকা আয় করে তা দিয়ে কি হামার জীবন চলে! হামার ঠিকমত খাবারে জোটে না আবার পড়াশুনা করব কিভাবে ! আমাদের দেখছেন না আমরা তাবুতে থাকি। আপনারা তো ধনী মানুষ বড় বড় ঘরে থাকে ভালো ভালো খাবার খান। আমরা প্রতিদিনই সাদা ভাত আর আলু সানা দিয়ে দু-বেলা খাবার জোটে। কোনো কোনো দিন খাবারে জোটে না। সেই দিন না খেয়ে থাকতে হয় । নাই ভালো জামা-কাপড়, লেখাপড়ার জন্য মনটা চায় কিন্তু দু-বেলা খাবারের জন্য বাবার সঙ্গে থাকতে হয় কি করে স্কুলে যাব। আমাদের পড়াশুনা করে কি হবে ? আমরা পেট ভরে খেতে চাই। কেউ আমাদের খোঁজ-খবর রাখে না। এই কথাগুলো অনেকটা কষ্টের সাথে বললেন ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশুরা।
তাবুতে থাকা তাজমীম বেগম জানান, তার স্বামী গ্রামে গ্রামে ঘুরে তাবিশ-কোবজ বিক্রি করেন দেড় থেকে ২০০ টাকা পায়। তিনি গ্রামে গ্রামে মানুষের বাড়িতে ঘুরে কিছু চাল সংগ্রহ করেন। তাই দিয়ে চলে তাদের পাঁচ সদস্যের সংসার।
বেদে সম্প্রদায়ের সদ্দার হান্নান মিয়া জানান, দেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার বেদে সম্প্রদায় আছে। তাদের বেশির ভাগ পরিবারের অবস্থা করুন।
তিনি আরও জানান, আমরা দু-মুঠো খাবারের জন্য বাংলাদেশের শেষ প্রান্তে এসেছি। আমাদের মতো শত শত গরীব অসহায় বেদে পরিবার বেঁচে থাকার তাগিতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় গিয়ে একই পেশায় নিয়জিত। সরকার বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিলেও বেদে সম্প্রদায়ের স্বচ্ছল পরিবাররাই এই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে । আমাদের মতো গরীব অসহায় বেদে সম্প্রদায় এই সুযোগ-সুবিধা থেকে আমরা বঞ্চিত। তাই আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে দু-মঠো খাবারের জন্য ঘুরে ঘুরে জীবন বাঁচার জন্য লড়াই সংগ্রাম করছি।
এসআইএইচ