পঞ্চগড়ে নৌকাডুবি: নিহতদের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন
মহালয়া উপলক্ষে ধর্মসভায় যোগ দিবেন বলে রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বদেশ্বরী মন্দিরে নৌকায় করে রওনা হন একই পরিবারের চারজন। কিন্তু সেই উৎসবের ক্ষণে দেখা দিল বিষাদের ছায়া। নৌকাটিতে ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত লোক ওঠায় পানিতে ডুবে ২৯ জনের মৃত্যু ও অর্ধশতাধিক নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর গ্রামের রবিন রায়ের স্ত্রী তারা রায় (২২), শিশু সন্তান বিষ্ণু (২) বাবুল রায়ের শিশু সন্তান দিপঙ্কর রায় (৫) কার্তিক রায়ের স্ত্রী লক্ষী রানী (২০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরিবারের চারজনের মৃত্যুতে পুরোগ্রাম জুড়ে শোকের মাতল। তাদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।
স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে হারিয়ে রবিন রায় ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গতকাল রবিবার দুপুরে আমার স্ত্রী, সন্তান, আমার ভাই কার্তিকের স্ত্রী ও বাবুল রায়ের ছেলে মহালয়া উপলক্ষে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে ধর্মসভায় যোগ দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়া ঘাটে করতোয়া নদী নৌকায় করে পার হওয়ার সময় নৌকা ডুবে অনেকেই মারা যান। এ সময় আমার স্ত্রী, সন্তান ও ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানও মারা যায়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানায়, ওই নদীতে কোনো সেতু না থাকায় রবিবার দুপুরের দিকে ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে শতাধিক যাত্রী একটি মাত্র নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তারা তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম ফরিদ একই পরিবারের চারজনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করে ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর এলাকায় একই পরিবারের চারজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ওই পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে।
আজ সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত নিখোঁজদের অপেক্ষায় স্বজনদের নদীর পাড়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। নিহতদের মধ্যে ৮ শিশু, ৪ পুরুষ ও ১২ জন নারী রয়েছেন।
এদিকে নৌকাডুবি ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।
নিহতদের মধ্যে যাদের পরিচয় পাওয়া গেছে তারা হলেন, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী গ্রামের কলি রানী (১৪), দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা হাতিডোবা গ্রামের লক্ষী রানী (২৫), পশ্চিম শিকারপুর গ্রামের অমল চন্দ্র (৩৫), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট গ্রামের শোভা রানী (২৭), দেবীগঞ্জের শালডাঙ্গা হাতিডোবা গ্রামের দীপংকর (৩), বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনপাড়া গ্রামের প্রিয়ন্ত (আড়াই বছর), দেবীগঞ্জের লক্ষীগড় ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের প্রমিলা রানী (৫৫), ছত্র শিকারপুর গ্রামের তারা রানী (২৪), পাঁচপীর বংশিধর পুজারী গ্রামের সনেকা রানী (৬০), সাকোয়া শিকারপুর প্রধানপাড়া গ্রামের ফাল্গুনী রানী (৫৫), পাঁচপীর জয়নন্দবড়ুয়া গ্রামের প্রমিলা রানী (৭০), দেবীগঞ্জ শালাডাঙ্গা তেলীপাড়া গ্রামের ধনো বালা (৫৭), পাঁচপীর ইউনিয়নের বংশিধর গ্রামের সুমিত্রা রানী (৫৭), ময়দানদিঘী গ্রামের সফলতা রানী (৫০), খুশি রানী (৩৬), মাড়েয়া বামনহাট গ্রামের শিমলা রানী (৩৫), বড়শশি ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামের হাসান আলী (৫২), মাড়েয়া আলোকপাড়া গ্রামের উশশি (শিশু), হাতিডোবা গ্রামের তনুশী (শিশু) পাঁচপীর মদনহার গ্রামের শ্রেয়শী (শিশু)।
আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবিতে ২৫ জন নিহতের ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রেলমন্ত্রী অ্যাডভোকেট নূরুল ইসলাম সুজন।
এসআইএইচ