নির্বাচনী সহিংসতায় মামলা
'কখন আসবে বাবা?'
মামলা আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকায় বাবাকে খুঁজছে সন্তান, মাকে কেঁদে কেঁদে বলছে কখন আসবে বাবা। গেল কয়েকদিন ধরে বাবাকে দেখতে না পেয়ে কাঁদছিল ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের কয়েকটি পরিবারের শিশু।
গত ২৭ জুলাই ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশের পক্ষ থেকে অজ্ঞাত ৮০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
দূর থেকে মানুষের আওয়াজ পেলেই রাস্তায় ছুটে আসে কোমলমতি শিশুরা। কিছু না বুঝলেও বাবার অনুপস্থিতি তাদের কাঁদায়। বাবার স্নেহ, আদর পেয়ে ছোট থেকে বড় হতে শুরু করলেও বর্তমান পরিস্থিতি দূরে ঢেলে দিয়েছে সেই গ্রামসহ আশপাশের বেশকিছু পরিবারকে। নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আতঙ্কে নারীরাও।
সরেজমিনে দেখা যায়, যারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা অনেকেই বাচোর ইউনিয়নের ভোটার নন। কেউ নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে বগুড়া থেকে এসেছেন, কেউ হাতিবান্ধা থেকে আবার কেউ এসেছেন ঢাকার সাভার থেকে। এই ইউনিয়নের ভোটার না হয়েও মা-বাবা, স্ত্রী ও শিশু সন্তান রেখে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তাদের।
মহেশপুর গ্রামের শিশু রাসেল ও ইসরাফিলের মতো কয়েকজন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানায়, পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকে না বাবা। ছোট ভাই বাবার জন্য কাঁদে। রাতে অনেক ভয় করে, কষ্ট হয়। আমাদের গ্রামে একটা বাচ্চা মারা গেছে। এজন্য বাবা বাড়িতে থাকতে পারে না। স্কুল যেতে পারিনা। বাড়িতে বাজার নেই, মা রান্না করে না। আজ বাবা থাকলে খাবারের কষ্ট হতো না। এক-দুদিন পর পর এখানে দু-তিনটা পুলিশের গাড়ি আসে। মা-চাচিদের কী জানি জিজ্ঞাসা করে আবার চলে যায়। তখন আরও ভয় লাগে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চায় তারা।
উল্লেখ্য, সাত মাস বয়সী নিহত সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্র এলাকায় অবস্থান করছিলেন। ফলাফলকে কেন্দ্র করে পরাজিত ইউপি সদস্য সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছুঁড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় শিশু সুরাইয়া। তবে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন ঠাকুরগাঁও পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন।
এসজি/