নির্বাচনী সহিংসতার আতঙ্কে স্কুলে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় বাচোর ইউনিয়নে পুলিশের গুলিতে সুরাইয়া আক্তার নামে সাত মাস বয়সী শিশু নিহত হওয়ায় এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা।
মহেশপুর, ভাংবাড়ি, ফুটকিবাড়িসহ আশপাশের গ্রামের অভিভাবকরা জানান, ভোটের দিন ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে এক শিশু মারা যায়। এ কারণে আতঙ্কে বিদ্যালয়ে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। পুলিশ কারো নাম উল্লেখ না করে ৮০০ জনকে আসামি করে মামলা করেছে। বাড়িতে পুরুষ সদস্য না থাকায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগছে। আমরা গরিব মানুষ। দিন আনে দিন খাই। মারামারি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। এরপরেও আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাড়ির পুরুষরা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানান তারা।
ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বিদ্যালয়ে শুনশান নীরবতা। অফিস রুমে বসে শিক্ষকরা গল্প করছেন আর পাশের ক্লাস রুমে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস করছেন এক শিক্ষিকা।
এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, কয়েকদিন পর স্কুলে আসলাম। তবুও ভয় হচ্ছে পুলিশের। আজ স্কুলে ২৫-৩০ জন পুলিশ এসেছিল। পরে জানতে পারি তারা তদন্ত করতে এসেছেন। মামলা হওয়ার কারণে মা-বাবা আমাদের স্কুলে আসতে দেয় না। আমার অনেক সহপাঠী বাড়ি ঘর ছেড়ে মা-বাবার সঙ্গে অনত্র চলে গেছে। আমরা আর এভাবে কতদিন পুলিশের ভয়ে থাকব? আমাদের বাবা, চাচারা ভোটের রাত থেকে বাড়িতে থাকেন না। মা আর ছোট ভাই-বোন একাই বাড়িতে থাকে।
এ বিষয়ে ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিনুর রহমান জানান, গত বুধবার (২৭ জুলাই) আমার স্কুল মহেশপুর ওয়ার্ডের একটি ভোটকেন্দ্র ছিল। ভোটের ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। এ সময় সাত মাসের একটি শিশু নিহত হয়। ঘটনাটি স্কুল থেকে ৩০০ গজ দূরে পাকা রাস্তায় ঘটে। শিক্ষার্থীরা এখন স্কুলে আসতে ভয় পায়। অভিভাবকরা দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছে সন্তানদের স্কুলে পাঠাবে কিনা। সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় যেন আনা হয় প্রশাসনের কাছে এটাই দাবি। আর এলাকার নিরীহ মানুষ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়।
উল্লেখ্য, নিহত সুরাইয়াকে নিয়ে মা মিনারা বেগম রাণীশংকৈল উপজেলার বাচোর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ভাংবাড়ি ভিএফ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোটের ফলাফল দেখতে যান। সেখানে ভোটের ফলাফলকে কেন্দ্র করে পরাজিত ইউপি সদস্যের সমর্থকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংর্ঘষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি ছুড়লে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশু সুরাইয়া আক্তার নিহত হয়।
এসজি/