নওগাঁয় শুরু হচ্ছে ৭দিন ব্যাপী বইমেলা
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
নওগাঁয় শুরু হচ্ছে সপ্তাহব্যাপী বইমেলা। স্থানীয় সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন একুশে পরিষদ নওগাঁর উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শহরের ঐতিহ্যবাহী কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এই মেলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে।
মেলা চলবে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মেলা উদ্বোধন করবেন জেলা প্রশাসক মোঃ গোলাম মওলা। মেলার শেষ দিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
এদিকে মেলাকে ঘিরে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। মেলা নিয়ে ইতোমধ্যে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
সংগঠনের সাধারন সম্পাদক এস এম রাসেল জানান ১৯৯৪ সালে ভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে ১৮ফেব্রুয়ারী ড. জোহা দিবস পালনের মাধ্যমে সংগঠনটি যাত্রা শুরু হয়। এরপর থেকে ওই দিনটিই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হিসেবে পালন করা হয়। শুরুতে সংগঠনটি ‘একুশে উদযাপন পরিষদ নওগাঁ’ নাম ছিল। পরিবর্তীতে উদযাপন শব্দটি বাদ দিয়ে ‘একুশে পরিষদ নওগাঁ’ নামকরণ করা হয়। ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে মূল চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আর্দশকে ধারণ করে সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে নিরলসহীন ভাবে।
শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে ছোট পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো। সঙ্গে দুইটি বইয়ের দোকান দেয়া হতো। পরবর্তী সময়ে কোন বছর বইয়ের দোকান ছিল আবার কোন বছর ছিল না। কিন্তু ২০১১ সালে চার-পাঁচটি বইয়ের দোকান নিয়ে নওগাঁ কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে মেলা শুরু হয়। সঙ্গে দুই-একটি খাবারের দোকান এবং কুটির ও বুটিক শিল্পের দোকান যুক্ত হয়। এরপর ২০১৮ সালে মেলার পরিসর বৃদ্ধি করা হয় এবং মেলা শুরু হয় কৃষ্ণধন (কেডি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের খোলা মাঠে। তখন থেকে সেখানে বইমেলার অনুষ্ঠানমালা এখন পর্যন্ত চলমান আছে। এ বছর মেলায় বইয়ের দোকান ৩০টি, খাবার ও হ্যান্ডিক্রাফট এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসহ অন্তত ৮০ টি দোকান থাকবে।
ভাষা শহীদ ও ভাষা আন্দোলনের চেতনা ছড়িয়ে দিতে এবং শুদ্ধ বাংলার ব্যবহার করতে স্কুল পর্যায়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়। আয়োজনে থাকছে শিক্ষার্থীদের জন্য ভাষার গান, সাধারণ জ্ঞান, গদ্যপাঠ ও হাতের সুন্দর লেখা প্রতিযোগীতা সহ নানা আয়োজন।
১৫ ফেব্রুয়ারি দেশ বরেণ্য আবৃত্তি শিল্পী টিটো মুন্সী’র একক আবৃত্তি, শতকণ্ঠে কালজয়ী ভাষার গান, পাঠাগার ও পরিবেশ আন্দোলন অবদান রাখায় আলমগীর কবির সংবর্ধনা, শরৎ পালের বাঁশির ধুন ও নৃত্যানুষ্ঠান। পরদিন শুক্রবার ভাষা সংগ্রামী শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মরণে আলোচনা সভা। শনিবার গদ্যপাঠ প্রতিযোগীতা, মুকাভিনয়, সপ্তক সঙ্গীত ও নৃত্য। বোরবার জোহা দিবসে আলোচনা ও দেশ বরেণ্য ফুটবলার তারিক কাজী সংবর্ধনা। সোমবার শহীদ কাজী নূরন্নবী ও শহীদ মামুন স্মরণে আলোচনা সভা। মঙ্গলবার ভাষার গান, আবৃত্তি ও নাটক। ২১ শে ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পন, ভাষা সংগ্রামী ডা. মঞ্জুর হোসেনের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন, আলোচনা ও পুরস্কার বিতরণ।
নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার লক্ষে নওগাঁর আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাষাসংগ্রামী এবং বিভিন্ন বধ্যভূমি খুঁজে বের করা। প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে বেশকিছু বধ্যভূমি আবিষ্কার করেছে এ সংগঠন। কিছু বধ্যভূমিতে নিজ অর্থায়নে স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন গণহত্যা দিবস পালন করা হয়। ভাষা সংগ্রামী সহ বিশিষ্ট গুণিজনদের জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী আলোচনা ও স্মরণ সভা সহ সাম্প্রদায়িকতা, সামাজিক অবক্ষয় ও অনৈতিকতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হয়। পরিষদের এসব প্রচেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছে বিশিষ্ট জনসহ সকল শ্রেনীর মানুষ।
একুশে পরিষদ নওগাঁর সভাপতি ডিএম অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী বলেন, নতুন প্রজন্মকে উজ্জিবিত করতে আমাদের এ প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে। মহান একুশের চেতনা ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করছে সংগঠন। আমি বিশ্বাস করি একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পথে আমাদের দ্বিধাহীন অভিযাত্রা অনন্তকাল ধরে চলবে। এ বছর সপ্তাহব্যাপী নানা অনুষ্ঠানমালা দিয়ে সাজানো হয়েছে। গুনীজনদের একুশে পরিষদ পদক ও পুরস্কার প্রদান করা হবে।