বসন্ত উৎসবকে স্বাগত জানতে প্রস্তুত নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্ক
মাঘের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। প্রকৃতির রুপ দেখে বোঝা যাচ্ছে শীতকাল চলে যাচ্ছে। হঠাৎ কী মনে করে যেন নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্কে ঢুকে পড়া। শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই সবুজ ভূমি অসংখ্যবার চষে বেড়ানো হয়েছে। এর পরও মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দেখাটা আলাদা মনে হলো। প্রবেশ পথেই দেখা যায় ফুল আর ফুল। একসঙ্গে ফুটে আছে। পার্কের ভেতরে প্রবেশ করতেই নতুন মনে হয় চারপাশটাকে। রঙিন মনে হয়। বার্তাটা পরিষ্কার ফাল্গুন আসছে। ভেতরে অদ্ভুত একটা অনুভূতি অনুভূত হয়। তবে আগেভাগে যারা বসন্ত উৎসবে যোগ দিতে চান তাদের স্বাগত জানতে প্রস্তুত পার্কটি।
স্থানীয় ভাষ্যমতে, বৃটিশ আমলে ১৯২০ সালে নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্র নওগাঁ জেলা পরিষদ পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয় । পার্কটি ২.৪৬ একরজুড়ে। পার্কের ভিতরে ১.২০ একর বিশিষ্ট একটি পুকুর রয়েছে। যার চারপাশে নারিকেল গাছ ও অন্যান্য গাছ রয়েছে। পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রয়েছে। পুকুরটি খুবই গভীর । পার্কের অভ্যন্তরে দুটি রাস্তা পুরুষ ও নারীদের হাঁটার জন্য পৃথকভাবে তৈরি করা আছে। পার্কের অভ্যন্তরীণ ২টি রাস্তা আছে। ভেতরের রাস্তা দ্রুত হেটে অতিক্রম করতে ৩ মিনিট এবং বাহিরের রাস্তা অতিক্রম করতে ৪ মিনিট সময় লাগে। বাহিরের রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩৪১৫ ফুট। পার্কের ভিতরটি বিভিন্ন ফুলগাছ, পাতা বাহার, হুইপিং দেবদারুসহ অনেক মূল্যবান গাছ সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য সজ্জিত রয়েছে।
পার্কের ভিতরে ঘুরে দেখা যায়, অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গাগুলোতে আলাদা করে বাগান করা হয়েছে। বসন্তের আগমন টের পেয়ে ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে বাগান। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জার্বেরা, ডালিয়া, ইত্যাদি ফুলের গাছ ভূমিভাগের খুব কাছাকাছি থেকে নিজেদের মেলে ধরেছে। ফুলগুলোও ঘন হয়ে ফুটেছে। একেক জাতের ফুল দিয়ে একেকটি স্বতন্ত্র বাগান করা হয়েছে। একটি বাগানে শুধুই চন্দ্রমল্লিকা। বড় বড় ফুলের ভারে গাছ কিছুটা মাটির দিকে ঝুঁকে পড়ছিল। তাই নরম কান্ডের সঙ্গে সরু খুঁটি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সাদা, হলুদ, বেগুনি ও গোলাপী রঙের একটিই ফুল। এত এত রঙের চন্দ্রমল্লিকা দেখতে কী যে ভালো লাগে! জার্বেরাও চন্দ্রমল্লিকার মতো কিছুটা। লাল, হলুদ, কমলা, সাদা, গোলাপী, বেগুনি ইত্যাদি রঙ নিয়ে ফুটেছে। আলাদা করে বলতে হয় গোলাপের কথা। একাধিক বাগানে সদ্য ফোটা ফুল। কিছু ফুল, কিছু এখনও কলি। ফোটার অপেক্ষায় আছে। গাছগুলো নির্ধারিত দূরত্বে লাগানো হয়েছে। সংখ্যায়ও খুব বেশি হবে না। গাঁদা ফুলেরও প্রকৃত সময় এখন। বিভিন্ন বাগানে ফুল ফুটে আছে। কোনোটি হলুদ দেখতে আবার কোনোটি কমলা রঙের। দূর থেকে দেখলে মনে হয় রঙের ফোয়ারা। গাঁদা ফুলের কাঁচা ঘ্রাণেও কী যেন আছে। শুকে দেখতেই হলো আবার। সত্যি কী যেন আছে! স্যালভিয়া ফুলের রংটা শুধু লাল নয়। গাড় লাল। মাটি থেকে সামান্য উঁচুতে ফুটে আছে। গাছ দেখা যায় না। পুরোটাই ফুলেল মনে হয়। অসংখ্য ফুল পাশাপাশি ফুটে আছে। অনেক দূর থেকে চোখ যায়। সঙ্গত কারণেই দারুণ আকর্ষণ করে।
কোনো কোনো জায়গায় আবার অনেক জাতের ফুল। পার্কের ভিতরে পলাশ, জারুল, সোনাপাতি, কামিনী ইত্যাদি গাছও। সবকটিতে ফুল এসেছে। এগুলো ঠিক বাগানের ফুল নয়। অপেক্ষাকৃত বড় গাছ। উদ্যানের বিভিন্ন অংশে দেখা যায় হলুদ সোনাপাতি। কড়া হলুদ রঙের ‘মাইক ফুল।’ থোকা থোকা ফুলে বসন্তের আগমন। পলাশের কথা না বললেই নয়। নওগাঁ সরকারি শিশু পরিবার বাগানে ফুলটি এবার প্রথম দেখা হয়েছিল। তার পর দেখা হলো পৌর পার্কে। শীতে পাতা ঝড়ে যাওয়ায় ফুলগুলো বিশেষভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ ছাড়াও পার্কজুড়ে আরও অনেক ফুল, বহু জাত পাত।
পার্কের দর্শনার্থীরা একটি দেখা শেষ করে অন্যটির দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন, ছবি তুলছিলেন। এ সময় কথা হয় দর্শনার্থী রাসেল ও নাইমা (ছদ্ম নাম) জুটির সঙ্গে। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল একান্তে কিছু সময় কাটাতে পার্কে এসেছেন। তাদের জন্য ফুল হয়েছে বাড়তি পাওয়া। নাইমা খুব খুশি। বললেন, পার্কে তো শুধু গাছই দেখি। আজ এত ফুল দেখা হলো, এখন মনে হচ্ছে পুরোটা ঘুরে দেখতে হবে। ফুলের বাগানের চারপাশে ছোটাছুটি করছিল শিশুরাও। কোনো কোনো শিশু তো ফুল ছেঁড়ার জন্য বার বার ছুটে যাচ্ছিল। শুধু কি ফুল? কনা নামের এক কিশোরী জানায়, ফুলের ওপর মৌমাছিও আছে। তার কথা শুনে কাছে যেতেই দেখা যায় প্রায় সবকটি ফুলে একটি করে মৌমাছি। মধু সংগ্রহ শুরু করে দিয়েছে তারা!
পার্কে ফুল দেখতে দেখতে ফেরার সময় হয়ে যায়। ‘বসন্ত বাতাসে সইগো বসন্ত বাতাসে বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’-এ বলে চলে আসতে হলো।
এসআইএইচ