সেই শিশুটি ফিরল মায়ের কোলে, মেলেনি পিতৃ পরিচয়!
সম্প্রতি নওগাঁ সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের সিঁড়িতে পড়ে ছিল ৪-৫ দিন বয়সী ফুটফুটে এক (মেয়ে) নবজাতক শিশু। পরে হাসপাতালটির ওয়ার্ড বয় রাজু শিশুটিকে কোলে তুলে নিয়ে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করান। শিশুটি উদ্ধারের তিনদিন পর গত ১৭ আগস্ট সন্ধান পাওয়া যায় শিশুটির মা সুমির। তবে শিশুটি মায়ের কোলে ফিরলেও পাওয়া যায়নি তার বাবার পরিচয়। বর্তমানে শিশু ও শিশুর মা সুমি রয়েছে একটি আশ্রয় কেন্দ্রে।
শিশুটির পিতৃত্বের পরিচয় জানতে কথা হয় শিশুর মা সুমির সঙ্গে। এসময় সুমি জানান, তার জন্ম, বেড়ে ওঠা এবং লেখাপড়া সবই নওগাঁতে। মায়ের সঙ্গে থাকতেন শহরের এক ভাড়া বাসায়। প্রায় ২ বছর আগে শহরের মিন্টু নামে এক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক হয় সুমির। এরপর মিন্টু নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে সুমির সঙ্গে একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক করেন। বিয়ে করবে বলে বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতিও দেয় মিন্টু। কিন্তু এর মধ্যে সুমির পেটে সন্তান আসবার পর থেকেই ফাটল ধরে ভালোবাসায়। অনেকভাবে চাপ দিয়েও সম্পর্ক মেনে নেননি মিন্টু।
সুমি আরও জানান, মিন্টু যে বিবাহিত এটা তার জানা ছিল না। শহরের দয়ালের মোড়ে তার একটা মুদি ও ফ্লেক্সি লোডের দোকান রয়েছে। মূলত দোকানে যাওয়া আসার মধ্যে দিয়েই তাদের সম্পর্ক হয়। এর মধ্যে সুমিকে বেশ কয়েকবার মিন্টু তার বাসা এবং বোনের বাসায় নিয়েও যায়। এলাকার প্রায় মানুষ তাদের একসঙ্গে চলাফেরা করতে দেখেছে। কিন্তু সন্তান পেটে আসার পর থেকে মিন্টু তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
অনেক চেষ্টা করেও সন্তান নষ্ট করতে পারেনি সুমি। তাই সমাজে মুখ দেখানোর লজ্জায়, বাধ্য হয়ে সন্তান প্রসবের পরে গত ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৭টার দিকে হাসপাতালের সিঁড়িতে রেখে চলে যায় সুমি। তবে নিজের সন্তানকে ফেলে রেখে গিয়ে থাকতে পারেনি সে। তাই সব কিছু ভুলে সন্তানের খোঁজে হাসপাতালে আসে সুমি।
কথা হয় সুমির মা আনোয়ারার সঙ্গে। তিনি জানান, সুমির বাবা মারা গেছে কয়েক বছর আগে। অন্যের বাসা-বাড়িতে কাজ করে মা-মেয়ের সংসার চলত। তবে মেয়ের এই সম্পর্কের কথা জানতেন না তিনি। যখন সুমির পেটে সন্তান আসে তখন বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন। এরপর বেশ কয়েকবার মিন্টুর সঙ্গে যোগাযোগও করেন আনোয়ারা। কিন্তু মিন্টু এসব বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলেনি। উল্ট সব কিছু অস্বীকার করে সে। এরপর সুমির সন্তান প্রসবের পরে দুর্বিসহ জীবন কাটছে মা-মেয়ের। এদিকে ঘটনা জানাজানির হবার পর ভাড়া বাসা থেকে বের করে দিয়েছে তাদের।
এ বিষয়ে মিন্টুর সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, সে আমার দোকানে জিনিসপত্র নিতে আসতো। আর এই এভাবেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। এর বাহিরে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু সুমি কেনো আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করছে এটা ঠিক আমার জানা নেই বলেও জানান মিন্টু।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট মুহশীন রেজার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, সুমি যাতে করে তার সন্তানের পিতৃ পরিচয় পায় এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া রয়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আইনের আশ্রয় নিতে পারেন সুমির পরিবার। মামলা হওয়ার পরে পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ টেস্ট এর মধ্য দিয়ে তাদের পরিচয় পাওয়া সম্ভব।
এএজেড