সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে স্মার্টফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। বর্তমান আধুনিক যুগে মোবাইল ছাড়া জীবনকে চিন্তা করাটাই কঠিন। প্রতিনিয়ত অত্যাধুনিক সব ফিচারের দিকে যাচ্ছে মোবাইল ফোন। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নানা সুযোগ সুবিধাসহ ফোন আনতে রীতিমতো প্রতিযোগিতা করছে প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
বিভিন্ন ফিচারের মতো দামেও রয়েছে ভিন্নতা। তবে যত দামি ফোনই হোক না কেন, তার আয়ু খুব বেশি হলে তিন-চার বছর। তারপরেই দেখা দেয় নানা সমস্যা। তবে আয়ু শেষের আগেই আমাদেরই কিছু ভুলে নষ্ট হয়ে যেতে পারে শখের স্মার্টফোনটি।
জেনে নিন কোন ৭ ভুলের কারণে অকালে নষ্ট হচ্ছে শখের স্মার্টফোনটি।
১. দীর্ঘ সময় ধরে বেশি তাপমাত্রার সংস্পর্শে স্মার্টফোন রাখা:
স্মার্টফোন নষ্ট হয়ে যাওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হচ্ছে অতিরিক্ত তাপমাত্রার মধ্যে ফোন রাখা। যদি আপনি রোদে বা শীতের রাতে আপনার বালিশের নিচে ফোন রেখে চার্জ করলে ডিভাইজ গরম হতে থাকে। যা ধীরে ধীরে ডিভাইসটি নষ্ট করে দিবে। এছাড়া দীর্ঘ সময় ফোন চালালেও সেট গরম হয়ে যায়। এরপরও তা বুঝতে পেরে একটানা সেট ব্যবহার করলে দ্রুতই সেট নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ফোন গরম হয়ে গেলে তা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার না করাই উত্তম।
২. চার্জারের ব্যবহার:
বর্তমানে অনেক কোম্পানি তাদের ফ্লাগশীপ ফোনগুলোর সঙ্গে চার্জার দেয় না। এরফলে ব্যবহারকারী বা ক্রেতারা আলাদা চার্জার কিনেন নেন। অনেকে ভুলটা এ সময়ই করে থাকেন। কারণ স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্ষমতা বুঝে কত ওয়ার্ডের চার্জার দরকার হয়ে সেটি বুঝতে পারেন না। সব চার্জার একই পরিমাণ শক্তি সরবরাহ করে না। ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার দিয়ে চার্জ করলে প্রতিনিয়ত ফোনের আয়ু কমতে থাকবে। এক সময় পুরো ডিভাইসটি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই মানের দিক থেকে যেসব চার্জার ভালো এবং ফোন অনুযায়ী সামঞ্জস্যপূর্ণ সেগুলো ব্যবহার করা ভালো।
৩. অ্যাপ ডাউনলোড:
অ্যাপ ডাউনলোডের সময় সচেতন থাকতে হবে। অনেক ব্যবহারকারী Play Store বা App Store এ অ্যাপ না পেলে থার্ডপার্টি অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন। তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা আপনার ডিভাইসকে ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। ক্ষতিকর অ্যাপ আপনার ডিভাইসকে ভাইরাস এবং স্পাইওয়্যারের মাধ্যমে সংক্রমিত করতে পারে। যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড এবং এমনকি ব্যাংক সংক্রান্ত তথ্য চুরি করতে পারে। এর পাশাপাশি সাইবার অপরাধীরা আপনার ডিভাইসের ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনে প্রবেশাধিকার পেতে পারে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অফিসিয়াল স্টোর থেকে অ্যাপ ডাউনলোড করা নিরাপদ। কারণ সেখানে একটি যাচাইকরণ প্রক্রিয়া থাকে যা ক্ষতিকর অ্যাপগুলোকে তালিকাভুক্ত হওয়া থেকে আটকায় এবং এগুলো এড়িয়ে চলার সুযোগ বাড়ায়।
৪. ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ নিজে থেকে বন্ধ করা:
আপনি কি ফোনের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রায়ই ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকা সব অ্যাপ বন্ধ করে দেন? এটির প্রয়োজন নেই। এর ফলে ভালো হওয়ার চেয়ে বেশি ক্ষতি হতে পারে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, যখন সক্রিয়ভাবে কোনো অ্যাপ ব্যবহার করছেন না তখন ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকা অ্যাপগুলো আপনার ডিভাইসকে ধীর করে দেয়।
তবে আধুনিক স্মার্টফোনগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এগুলো এমন কাজ পরিচালনা করতে পারে যেখানে অ্যাপগুলো কম শক্তি ব্যবহারের অবস্থায় থাকে যতক্ষণ না এগুলো প্রয়োজন হয়।
অ্যাপগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকা অবস্থায় রাখা ভালো কারণ আপনার ফোন সক্রিয় অ্যাপ থেকে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপে স্যুইচ করার জন্য কম শক্তি ব্যবহার করে। এতে করে আপনি যেখানে কাজ শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই দ্রুত শুরু করতে পারেন এবং এটি ডিভাইসের ওপর কম চাপ ফেলে। অন্যদিকে অ্যাপটি প্রথম থেকে চালু করার চেয়ে লো-পাওয়ার অবস্থান থেকে পুনরায় চালু করা কম শক্তি ব্যবহার করে। এটি অনেকটা আপনার হিটার যেমন প্রথমবার চালু করার চেয়ে নির্ধারিত তাপমাত্রা বজায় রাখতে কম শক্তি ব্যবহার করে তার মত করে।
৫. আপডেটেড না থাক:
স্মার্টফোন চালু করার পর অনেক প্রতিষ্ঠানই প্রতিবছর এমনকি ৬ মাস পরপর আডটেড করার প্রস্তাব দেয়। এটি ডিভাসইকে সুরক্ষা করে। কিন্তু অনেকেই আপডেট না দিয়ে তা উপেক্ষা করে চলে। কিন্তু এসব আপডেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যা আপনার ডিভাইসকে মসৃণ এবং সুরক্ষিতভাবে চলতে সহায়তা করে।
সাধারণত, এই আপডেটগুলো শুধু ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা উন্নত করার উপরই জোর দেয় না, বরং এতে নিরাপত্তা প্যাচও অন্তর্ভুক্ত থাকে যা নতুন আবিষ্কৃত দুর্বলতাগুলো ঠিক করে। এগুলো উপেক্ষা করলে আপনি মূলত আপনার ফোনকে ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছেন। এছাড়াও আপডেটগুলো ফোনের বাগ ঠিক করে। যা আপনার ডিভাইসকে ধীর বা বিকল করে দিতে পারে।
৬. স্মার্টফোনের চার্জিং অভ্যাস:
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যদি স্মার্টফোনের ব্যাটারির ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় তাহলে এর জন্য দায়ী হতে পারে খারাপ চার্জিং অভ্যাস। এর কারণে প্রতিনিয়ত ব্যাটারির ড্রেনিং সিস্টেম নিচের দিকে নাতে। ব্যাটারি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাওয়া বা শতভাগ চার্জ দেয়া ব্যাটারির দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। ব্যাটারির নির্দিষ্ট সংখ্যক চার্জ সাইকেল থাকে, এবং বারবার এই প্রক্রিয়া করলে এর কার্যকারিতা কমে যায়। স্বাভাবিকভাবে আপনার ফোনের চার্জ ৩০% থেকে ৮০% এর মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। এতে কম চার্জ সাইকেল ব্যবহার হবে এবং ব্যাটারির আয়ু বাড়বে।
এর পাশাপাশি চার্জিংয়ের সময় আপনার ফোন সাধারণত কিছুটা গরম হয় যা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় স্বাভাবিক হবে। তবে এটি বেশি গরম হয় তাহলে ব্যাটারির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে। তাই ঠাণ্ডা বা বায়ু চলাচলযোগ্য জায়গায় ফোন চার্জ দিন এবং বালিশের নিচে বা সরাসরি সূর্যের আলোতে চার্জ দেয়া থেকে বিরত থাকাই ভালো।
৭. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা:
অনেকেই নিজেস্ব ডাটা ব্যবহার না করে পাবলিকলি ওয়াইফাই ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে ঝুঁকি জড়িয়ে আছে। পাবলিক ওয়াই-ফাই হটস্পটগুলো সাধারণত নিরাপত্তার দিক থেকে দুর্বল হয় কারণ এগুলো প্রায়শই এনক্রিপশন ছাড়া বা দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে পরিচালিত হয়। এর ফলে, সাইবার অপরাধীরা সহজেই পাসওয়ার্ড ও ব্যাংক তথ্যের মতো ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।
যদি আপনাকে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহার করতেই হয়, তাহলে পাসওয়ার্ড-প্রোটেক্টেড এবং এনক্রিপটেড নেটওয়ার্কগুলোতে সংযোগ করুন। এমন সংবেদনশীল ওয়েবসাইটে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন যা আপনার ডিভাইস ও ব্যক্তিগত তথ্য বিপন্ন করতে পারে।