আবীর হাসানের গার্মেন্টস কর্মী থেকে ফ্রিল্যান্সার হওয়া গল্প
আবীর হাসান একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। ফাইভার ও আপওয়ার্কে যার অবস্থান এখন টপ রেটেড। গাজীপুর জেলায় অ্যাডভান্স লেভেলের সর্বপ্রথম আইটি ফার্ম ডিজিটাল এক্সপার্ট ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা, যা এখন আবীর হাসান আইটি ট্রেনিং সেন্টার গাজীপুর নামে পরিচিত। বাংলাদেশের সফল ফ্রিল্যান্সারদের এগিয়ে যাওয়ায় তালিকার মধ্যে আবীর হাসান একটি নাম।
মাত্র ২৫ বছর বয়সে কীভাবে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হলেন- জানতে চাইলে আবীর হাসান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার আইটির দিকে আগ্রহ ছিল বেশি। মোবাইলের সেটিং জনিত কোনো সমস্যা হলেই গ্রামের মানুষ আমার কাছে নিয়ে আসত, খুব অল্প সময়েই আমি সমাধান করে দিতে পারতাম। যার প্রতিফলন আইটি আছে এমন ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া এবং কম্পিউটার সায়েন্সে লেখা পড়া করা। কিন্তু কালক্রমে লেখাপড়ার পাশাপাশি সেই আগ্রহটাই যে আমাকে একজন সফল ফ্রিল্যান্সার করে তুলবে তা কখনোই ভাবতে পারিনি। ২০১৬ থেকে ২০১৯ এর জানুয়ারির শুরু পর্যন্ত গার্মেন্টস এর বিভিন্ন পদে চাকরি করে নিজের খরচ বহন করতে হয়েছে। এখন আলহামদুলিল্লাহ আমার মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে ৫০ জনের বেশি মানুষের।
তিনি জানান, প্রচুর শ্রম ধৈর্য আর ইচ্ছাশক্তির দ্বারাই ফ্রিল্যান্সার হয়েছেন তিনি। উৎসাহ দেওয়ার মতো ছিল না কেউ। প্রথমে একজন তুর্কি ব্যবসায়ীর ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৯ সালে নিজের ফাইবার অ্যাকাউন্ট খোলেন আবীর হাসান নামে। ফাইবার সহ বিভিন্ন সাইটে অল্প অল্প কাজ করার পাশাপাশি নিজের স্কিল বাড়াতে থাকেন তিনি। গত তিন বছরে পেয়েছেন অবিস্মরণীয় সাফল্য, কাজ করছেন ফেসবুক এবং আরও বেশ কিছু বিশ্ব বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।
আবীর হাসান আরও জানান, অনেক শ্রম এবং খুবই ধৈর্যের সঙ্গে কাজ শিখেছেন তিনি । প্রতিদানস্বরূপ তিনি এখন ভালো একজন ব্লকচেইন ডেভেলপার, ইথিক্যাল হ্যাকিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং সহ রয়েছে গুরত্বপূর্ণ ৮টি স্কিল। যার কারণে সফল ফ্রিল্যান্সার হয়েছেন তিনি।
আবীর হাসান বলেন, বর্তমান সময়ে প্রতিটি জেলাতেই গড়ে উঠছে ফ্রিল্যান্সিং বেইজড আইটি ফার্ম। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ডিজিটাল এক্সপার্ট ইনস্টিটিউট নামে একটি আইটি ফার্ম গঠন করেছি সারাদেশে কয়েকজন অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সার মিলে। সবার অনেক উৎসাহ পেয়েছি। এটির সফলতায় অর্জিত হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা, কর্মসংস্থান হবে অনেকের।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ও আমেরিকায়ও আইটি ফার্ম গঠন করার বেশ ইচ্ছা রয়েছে আবীরের।
তিনি বলেন, সফলতা এত সহজে আসেনি। সারাদিনের পরিশ্রমের পর সারারাত চলত একজন ক্লায়েন্টের জন্য অপেক্ষা। এখন ক্লায়েন্ট আমাকে খুঁজে বের করে। আমি নিজেকে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করতে চেয়েছি এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।
এখন আমি এক মাসে যা আয় করি তা অনেক পেশার মানুষের ছয় মাসের আয়ের থেকেও বেশি। এটা আমি দেশ বা বিদেশ যেকোনো জায়গায় থেকেই করতে পারি, যেটা তাদের বেলায় নেই। এটাই মূলত ভালো স্কিল বা ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে বিরাট ব্যবধান।
নতুন ফ্রিল্যান্সার বা যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং করতে ইচ্ছুক তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ফ্রিল্যান্সিংই হলো বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ আর তরুণরা হলো এর অন্যতম উত্তরসূরি। ফ্রিল্যান্সিং জীবন গড়ে নেওয়ার এক বিরাট প্ল্যাটফর্ম । বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এবং ভবিষ্য তরুণ প্রজন্ম এই প্ল্যাটফর্মে আসা যতটা দেরিতে হবে আফসোসটাও ততো ভারিই হবে। বাস্তবতা অনুভব করে নিজেকে সময়ের সাথে বদলাতেই হবে, নইলে সেই সময় আপনার নয়। ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট সময়কে নিজের করতে। তাই স্কিল শিখতে হবে। মেধা, শ্রম আর সময় দিয়ে নিজের স্কিল বাড়াতে হবে। আয় হবে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা, কর্মসংস্থান হবে নিজের। শুধু নিজের না, হয়তো একদিন আপনিও পারবেন আপনার মতো হাজার জনের কর্মসংস্থান তৈরী করার সুযোগ সৃষ্টি করতে। ধৈর্য্য আর নিষ্ঠা এবং অধ্যাবসায়ের সাথে কাজে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একজন সফল ফ্রিল্যান্সার হওয়া যাবে।
এসএন