ক্ষুধা-শীতের সঙ্গে কুড়িগ্রামের মানুষের লড়াই

টানা চারদিন ধরে উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় কুড়িগ্রামে জনজীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো শিশির পড়ছে। দুপুরের পর সূর্যের মুখ দেখা গেলেও রোদের উত্তাপ তেমন অনুভূত হয় না। ফলে এ জনপদে খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে।
শীত উপেক্ষা করে কেউ কেউ বাইরে বের হলেও কষ্টের সীমা নেই তাদের। একদিকে ঘন কুয়াশা অন্যদিকে হিমেল হাওয়া। কুয়াশার কারণে হেড লাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলাচল করছে যানবাহন। শীত বাড়ায় দুর্ভোগে পড়েছে শিশু,বয়স্ক, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ।
একদিকে গরম কাপড়ের অভাব অন্যদিকে পেটের ক্ষুধা। এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বয়ানক পরিস্থিতিতে আছেন গ্রাম ও চরাঞ্চলের গরিব মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে সারারাত প্রচণ্ড ঠান্ডার সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। সন্ধ্যার আগেই ফাঁকা হয়ে যায় হাট-বাজার, দোকান-পাট। শ্রমজীবীরা জানান, ঠান্ডার কারণে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না তারা। যদিও পেটের দায়ে কাজের খোঁজে বের হতেই হচ্ছে। ঠান্ডায় তাদের হাত-পা জমে আসে কাজ করতে কষ্ট হয়।পড়েছে গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন গবাদি পশুও।
নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের অটোরিকশাচালক শাহিন মিয়া জানান, ঘন কুয়াশার কারণে সড়কে চলাচল বিপদজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। হেড লাইট জ্বালিয়েও কিছু দেখা যায় না। এ ছাড়া সড়কে যাত্রী নেই বলে আয়ও কমে গেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কৃষি শ্রমিক আবুল কাশেম ও মন্টু চন্দ্র রায় জানান, কুয়াশা আর শীতের কারণে সময়মতো কাজে যোগ দিতে পারছেন না তারা। কাজে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরি হচ্ছে।
অধিকাংশ পরিবারেই ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। বুধবার সকালে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কনকনে ঠান্ডায় খড়-কুটো জ্বালিয়ে ঠান্ডা নিবারণের চেষ্টা করছেন শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেই। শীতবস্ত্রের অভাবে অতি কষ্টে দিন কাটছে জেলার হতদরিদ্র মানুষের। শুধু মানুষই নয় কাবু হয়ে
নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ঠান্ডাজনিত রোগ বিশেষ করে জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে হাসপাতালে অনেকে ভর্তি হচ্ছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা বেশি।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, বুধবার সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় এ জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এ শৈত্যপ্রবাহ আরও তিন-চার দিন থাকবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান,জেলায় এবারের শীতে ছিন্নমূল মানুষ যাতে ঠান্ডায় কষ্ট না পায় সেজন্য এরই মধ্যে ৩৫ হাজার কম্বল দেওয়া হয়েছে। ৯ উপজেলায় আরো ১ কোটি ৯ লাখ টাকার শীতের কাপড়সহ কম্বল উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওদের মাধ্যমে বিতরণ চলছে।
এসএন
