রংপুরে আগুন পোহাতে গিয়ে ১৬ জন নারী-শিশু দগ্ধ
শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য খড় জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত পাঁচ দিনে রংপুরে বিভিন্ন বয়সের নারী ও শিশু ১৬ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের গুরুতর অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান ডা. এম এ হামিদ পলাশ অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে এক বৃদ্ধাসহ দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন দগ্ধ রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোতে এক সপ্তাহ ধরে শীতের তীব্রতা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। সাময়িকভাবে শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে ১৬ জন দগ্ধ হয়েছেন।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে সাক্ষাৎ পাওয়া যায়, নীলফামারীর ডোমার থেকে আসা সাহেদা খাতুনের। তিনি জানান, বাড়িতে আগুন পোহাতে তার পরনের কাপড়ে আগুন ধরে যায়। এতে শরীরের বেশিরভাগ জায়গা দগ্ধ হয়েছে। তিনি আশঙ্কাজনক অবস্থায় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
সাহেদা খাতুনের বড় ছেলে নুর আলম বলেন, ‘চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মায়ের শরীরের ৬০ ভাগেরও বেশি দগ্ধ হয়েছে। উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিলেও পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় রংপুরের বার্ন ইউনিটে রাখা হয়েছে।’
কুড়িগ্রামের রৌমারীর চরাঞ্চল থেকে আসা দগ্ধ তসলিমা জানান, তার শরীরের হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত ৪০ ভাগ পুড়ে গেছে। একইভাবে পুড়ে গেছে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদিঘী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন। তার ১০ বছরের শিশু সালামের পা-সহ শরীরে বিভিন্ন অংশ দগ্ধ হয়েছে।
অগ্নিদগ্ধ রোগীদের স্বজনরা বলছেন, বার্ন ইউনিটে দগ্ধদের চিকিৎসা ব্যয়বহুল। এখানে যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের বেশিরভাগ রোগীর আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। অন্যদিকে হাসপাতাল থেকে তেমন কোনও ওষুধ সরবরাহ করা হয় না। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়। তাদের পক্ষে ব্যয় বহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ হামিদ পলাশ বলেছেন, ‘শীতের সময় রংপুর অঞ্চলে আগুন পোহানোর কারণে অসাবধানতাবশত দগ্ধ হন নারী ও শিশুরা। গত বছর ২৫ জনের বেশি নারী অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এ বছরেও অগ্নিদগ্ধ রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। এর মধ্যে এক বৃদ্ধার অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাকে ঢাকায় নেওয়ার কথা বলেছিলাম। কিন্তু আর্থিক সক্ষমতা না থাকায় তারা যেতে রাজি হয়নি। তাকে এখানেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
রংপুরের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, রংপুর অঞ্চলে গড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও হিমেল বাতাস আর ঘন কুয়াশায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। তাপমাত্রা বেশি না কমলেও হিমেল বাতাস মানুষকে কাবু করছে বেশি। তবে ২/৩ দিনের মধ্যে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামার সম্ভাবনা রয়েছে।
/এএন