'লঞ্চের দ্বিতীয় তলার গেট খোলা থাকলে অনেক মানুষ বেঁচে যেত'
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মহিউদ্দিন খান
রাত ৩টার দিকে বিকট এক শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। আমি কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই মানুষ আগুন আগুন বলে ছোটাছুটি শুরু করে। লঞ্চের সবাই এতটাই আতঙ্কিত ছিল যে কেউ আগুন নেভানোর ন্যূনতম চেষ্টা পর্যন্ত করেননি। কান্না জড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে বেঁচে ফেরা মো. মহিউদ্দিন খান। লঞ্চে আগুনের সেই বীভৎস অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন ঢাকাপ্রকাশের সঙ্গে।
মহিউদ্দিন খান বলেন, 'আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে লঞ্চের সব আলো নিভে যায়। মানুষ অন্ধকারে আরও আতঙ্কিত হয়ে পরে। আমি লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় ছিলাম। প্রাণে বাঁচতে নীচতলায় নামতে গিয়ে দেখি গেটে তালা ঝুলছে। আগুন লাগার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ডেক গরম হয়ে যায়। তাপের কারণে কেউ ঠিকভাবে দাঁড়াতে পারছিলাম না। লঞ্চের রেলিংগুলোও আগুনের তাপে প্রচুর গরম হয়ে গিয়েছিল।'
এক পর্যায়ে মানুষের ধাক্কাধাক্কিতে অন্ধকারে লঞ্চের ডেকে পড়ে যাই। ফলে আমার পা, মুখ ও হাত আগুনের তাপে ঝলসে যায়। মনে হচ্ছিল কেউ জলন্ত চুলার মাঝে আমাকে ফেলে দিয়েছে। অনেক কষ্টে ওঠে দোতলা থেকে নদীতে ঝাপ দেই।
রোববার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে বারবার কান্না করছিলেন বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার এই বাসিন্দা।
মহিউদ্দিন খান বলেন, 'পানি সাঁতরে কীভাবে তীরে আসলাম, কীভাবে বাঁচলাম আমি জানি না। এরপর গ্রামবাসী আমাকে উদ্ধার করে একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আল্লাহ নিজে বাঁচিয়েছে। সকালে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আমাকে উদ্ধার করে বরিশাল মেডিকেলে নিয়ে আসে। লঞ্চের দ্বিতীয় তলার গেট আটকানো না থাকলে হয়তো অনেক মানুষ বেঁচে যেত।'
আহত মহিউদ্দিনের শ্যালক মিরাজ হোসেন জানায়, 'দুলাভাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করেন। প্রায় ৫ মাস পর ৭ দিনের ছুটি পেয়েছিলেন তিনি। বাড়িতে আপু আর আমার দুই ভাগনে থাকে। তাদের সঙ্গে দেখা করতেই তিনি একা বাড়িতে আসছিলেন। ঘটনা শোনার পর অনেক কষ্টে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি দুলাভাই বরিশাল মেডিকেলে আছেন। আপু এই ঘটনা শোনার পর থেকে অসুস্থ। ভাগনেরাও ভালো নেই। আমরা গরিব মানুষ। টেস্ট ও এক্স-রে করিয়েছি। টাকা থাকলে ঢাকা নিয়ে যেতাম। আল্লাহ বাঁচিয়েছে, আল্লাহই সুস্থ করবে।'
এদিকে দগ্ধ ও আহত মহিউদ্দিন খান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে ঢাকা থেকে আগত ৭ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মাঝনদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। এর মধ্যে ৭২ জনকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টিটি/