চমেকে রোগী-স্বজনদের আতঙ্ক ‘আনসার’
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের নিয়ে রোগীর স্বজনদের অভিযোগের শেষ নেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। স্বজনদের অভিযোগ দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা।
চমেকে মোতায়েন কিছু আনসার সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পথে। চমেকে পুলিশের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করতে আনসার সদস্যদের নিয়োজিত। কিন্তু তারা জড়াচ্ছে দায়িত্বের বাইরে অন্য কাজে। আছে অপরাধ সংগঠনের অভিযোগও।
ঘুষ, চাঁদাবাজি কিংবা রোগীর স্বজনদের ওপর হামলা-সব অপরাধের অগ্রভাগে যেন আনসার সদস্যরা। বাহিনীটির প্রধান দায়িত্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু নিরাপত্তা মুখ্য নয় গৌণ দায়িত্বে পরিণত হয়েছে। তাদের বেপরোয়া আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা। বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনা হলেও কোনও শাস্তি না হওয়ায় তাদের মারমুখি আচরণ বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করছেন রোগীর স্বজনরা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘রোগীর স্বজনদের মারধরের ঘটনায় আমরা সমাধান করেছি। এ ঘটনায় আমরা ডিপার্টমেন্টাল ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
জানা গেছে, চলতি বছরে ছোট-বড় কমপক্ষে প্রায় ৫-৬টি ঘটনায় জড়িয়েছে চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। সর্বশেষ ১৪ ডিসেম্বর ঘুষ না দেওয়ায় রোগীর দুই স্বজনকে মারধর করে আনসার সদস্যরা। এর আগে চলতি বছরের ২৭ মার্চ রাতে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে দুই আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া হরহামেশা রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাগবিতন্ডায় জড়ায় আনসার সদস্যরা। অন্যদিকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালন করা আনসার সদস্যরা পার্কিং এলাকায় আসা অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে আদায় করে ইচ্ছামাফিক চাঁদা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘প্রধান গেট থেকে শুরু করে ওয়ার্ডে প্রবেশ করা পর্যন্ত পদে পদে আনসার সদস্যদের হয়রানির সম্মুখিন হতে হয়। রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় কোনও কিছু নিয়ে গেলেও তাদের বাধার মুখে পড়তে হয়। ১০-২০ টাকা না দিলে রোগীর কাছে যেতে দেওয়া হয় না।’
মো. মুজিবুর রহমান নামে এক রোগীর সন্তান বলেন, ‘গত চারদিন ধরে বাবা হাসপাতালের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। যতবার ওয়ার্ডে ঢোকার চেষ্টা করেছি ততবারই আনসার সদস্যের বাধার মুখে পড়েছি। আমার বাবাকে দেখার জন্য অনেক আত্মীয়-স্বজন আসছেন। তাদেরও ভিতরে প্রবেশ করতে দেয় না তারা। শেষ পর্যন্তক টাকা দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শুধু আনসার সদস্য নয়-হাসপাতালের আয়া ও ওয়ার্ডবয়রাও টাকা ছাড়া কোনো কাজ করে না। এমনকি রোগীকে নিয়ে কোনো টেস্ট করাতে যেতে হলে হুইল চেয়ার বা ট্রলির প্রয়োজন হয়। সেগুলিও ম্যানেজ করতে হয় টাকা দিয়ে। অথচ হাসপাতালে হুইল চেয়ার ও ট্রলি রাখা হয়েছে রোগীর সুবিধার্থে বিনামূল্যে ব্যবহারের জন্য।’
আনসার সদস্যদের এমন দৌরাত্ম্যর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ জানলেও তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মো. আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘আনসার সদস্যরা কোনো অপরাধ করলে শাস্তিস্বরূপ তাদের প্রত্যাহার করা হয়। কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের থাকে না। তবে আমরা বিষয়গুলো আনসার দপ্তরে অবহিত করি। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত বড় হাসপাতালে ২০০ থেকে ২৫০ জন আনসার সদস্যের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের লোকবল সে তুলনায় কম। অল্প সংখ্যক লোকবল দিয়ে এত মানুষকে সামাল দেওয়া যায় না। তাই মাঝে মধ্যে এমন ঘটনা ঘটে।’
জানতে চাইলে আনসার ও ভিডিপি চট্টগ্রাম উত্তর জোনের অধিনায়ক মো. শাহবুদ্দিন বলেন, ‘চমেকের ঘটনার পর আমরা তাৎক্ষণিক তাদের প্রত্যাহার করে নিয়েছি। যে কোনো ঘটনা সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযুক্ত আনসার সদস্যদের প্রত্যাহার করি। এই ঘটনায় তদন্ত চলছে। এখনও তদন্ত কাজ চলমান। সবার বক্তব্য নিচ্ছি। তদন্ত কাজ শেষ হলে আনসার সদস্যরা দোষি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এসব ঘটনায় আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি। আনসার ভিডিপিদের চাকরি তো অস্থায়ী। তাই যে কোন সদস্য ভূলবশত অপরাধ মুলক কাজ করতেও পারে। তাই বলে আমরা ছাড় দিচ্ছি না।’
/এএন