অবশেষে পুলিশে নিয়োগ পাচ্ছেন আসপিয়া ও মীম
জমি না থাকায় পুলিশের চাকরির অনিশ্চয়তায় পড়া বরিশালের হিজলার আসপিয়া ইসলাম এবং খুলনার সোনাডাঙ্গার মীম আক্তারের নিয়োগ হচ্ছে অবশেষে।
ঢাকাপ্রকাশের বরিশাল প্রতিনিধির পাঠানো সংবাদ অনুযায়ী হিজলার আলোচিত ‘ভূমিহীন’ কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়েছেন। পুলিশে চাকরি এবং একইসঙ্গে জমিসহ ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত আসপিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের দেওয়া ঘর নির্মাণের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
গত শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার হাতে তুলে দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. মিজান।
সাত স্তরের পরীক্ষায় পঞ্চম হওয়ার পরও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় কলেজছাত্রী আসপিয়ার চাকরি হবে না বলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জানিয়ে দিয়েছিল হিজলা থানা পুলিশ। এতে মাসনিকভাবে ভেঙে পড়েন পিতৃহীন আসপিয়া ও তার পরিবার।
যোগ্যতা বলে চাকরি পেতে গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইনে রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের কাছে গিয়েছিলেন আসপিয়া। ডিআইজি আসপিয়ার প্রতি সমবেদনা জানালেও তাকে চাকরি দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে পারেননি। ৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচর হয়। পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আসপিয়াকে জমিসহ ঘর এবং যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শাহ্ সাজেদা বলেন, ভূমিহীন হওয়ায় পুলিশ কনস্টেবলের চাকরি থেকে বাদ পড়তে যাওয়া আসপিয়ার চাকরি নিশ্চিত করা এবং তার জন্য জমিসহ ঘরের ব্যবস্থা করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ। আসপিয়ার চাকরি পাওয়াটা একটা উদাহরণ।
ঢাকাপ্রকাশের খুলনা প্রতিনিধির পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কনস্টেবল পদে প্রশিক্ষণে অংশ নেয়ার জন্য মীম আক্তারকে নোটিশপত্র দেওয়া হয়েছে। খুলনা টেক্সটাইল মিল পুলিশ ফাঁড়িতে মীম ও তার বাবার হাতে এ পত্র তুলে দেন পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিকাইল।
মীম আক্তার নোটিশপত্র পেয়ে আনন্দে আপ্লুত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশের চাকরিটা পেয়ে আমার ভালো লাগছে। গরিবের কষ্টটা কেমন আমি বুঝেছি। পুলিশের দায়িত্ব পালনকালে যদি কখনও অসহায় মানুষ সামনে আসে তাদের প্রতি আমার সহমর্মিতা থাকবে ‘
মীমের বাবা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সাংবাদিকদের সহযোগিতায় সবার মুখে মুখে আলোচিত হওয়ার পর মীম চাকরিটা পেয়েছে। খুলনার জেলা প্রশাসক স্যার ঘর করে দেবেন বলে জানিয়েছেন।’
খুলনা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তানভীর আহম্মেদ বলেন, ‘পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হয় মীম আক্তার। তবে পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। আমরা ঘটনাটি পুলিশ হেড কোয়ার্টারে জানাই। অবশেষে পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশনায় মীমের আবেদন আমরা গ্রহণ করি। মীমকে ট্রেনিংয়ের জন্য ডাকা হয়েছে। ট্রেনিং শেষে মীম চূড়ান্ত নিয়োগপত্র পাবেন ‘
স্থায়ী ঠিকানার সমস্যা সমাধান প্রসঙ্গে তিনি কোনো কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এটি পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে জানতে হবে। আমরা কেবল নির্দেশনা পালন করেছি।’
উল্লেখ্য, ট্রেইনি কনস্টেবল পদে সাধারণ নারী কোটায় মেধা তালিকায় প্রথম হওয়ার পরও ১১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে খুলনা পুলিশ সুপার কার্যালয় থেকে মীমকে জানিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ভেরিফিকেশনে স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরিটি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমন খবর শুনে হতাশায় ভেঙে পড়ে মীমের ভূমিহীন পরিবার।
মীম আক্তার খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার ৩ নম্বর আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডে ডাক্তার বাবর আলীর বাড়ির ভাড়াটিয়া বাসিন্দা। বাবা মো. রবিউল ইসলাম খুলনার বয়রা ক্রস রোডে ছোট একটি দোকান ভাড়া নিয়ে লেপতোশকের ব্যবসা করেন। দোকানটির নাম বেডিং হাউজ। মীমের বাবার খুলনা জেলায় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে জমি নেই দেখে পুলিশ কনস্টেবল পদে মীমের চাকরির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
এসআই/এসও/এএন