নওগাঁয় ঈদ উৎসবের রঙ লেগেছে কেনাকাটায়
ঈদ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পোশাকের বাজার। বেচাকেনা জমে উঠায় ঈদ উৎসবের রঙ লেগেছে নওগাঁর মার্কেট এলাকার বিপণিবিতানগুলো। কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছে ক্রেতারা।
দুই বছর পর স্বাভাবিক কেনাকাটা করতে পারছেন মানুষ। করোনার বিধিনিষেধ থাকায় বিগত দুই বছরে কেনাকাটা করলেও সেটি ছিল নানা নিয়মের বেড়াজালে। উৎসবের রঙ ছিল না সেই কেনাকাটায়। এবার বিধিনিষেধ না থাকায় উৎসাহ নিয়ে মার্কেটে ছুটছেন সবাই।
ইসলামপুর রোডে জলিল গার্মেন্টসের বিক্রয়কর্মী লালু বলেন, ‘বৈশাখের আগে থেকেই মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। হয়তো করোনার সময়ে মন খুলে কেনাকাটা, ঘুরে দেখতে পারেনি। আবার অনেকেই ভিড় এড়াতে আগে শুরু করেন। এবার শুরু থেকেই ভিড় দেখা যাচ্ছে, মানে শেষের দিকে হয়তো চাপ কমে যাবে। প্রতিটি ছুটির দিন লোকে লোকারণ্য হয়ে যাচ্ছে শপিংমল, মার্কেটগুলো।’
নওগাঁ জেলা গার্মেন্টস খুচরা বিক্রেতা মালিক সমিতি সভাপতি আলহাজ মোহাম্মদ নাসির হোসেন চৌধুরী বাপ্পী ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন ‘এবার একটু আগে কেনাকাটা করছে মানুষ এটা ঠিক। বিষয়টি আমার ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই আশার খবর। করোনায় যে দুটো বছর চলে গেছে সেটির ক্ষতি হয়তো পোষাতে পারবো না। তবে কেনাকাটায় মানুষের আগ্রহ ও যে ভিড় দেখছি, এটিতে এখন পর্যন্ত আমরা খুশি।
সোমবার (১৬ রমজান/১৮ এপ্রিল) মানুষের তিল ধারণের জায়গা ছিল না বড় শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে। নওগাঁর পুরাতন সোনালী ব্যাংক রোডে মানুষের ভিড় সামাল দিতে কিছুক্ষণ পরপর প্রবেশ পথ বন্ধ রাখতে দেখা যায়। তুলাপট্টি রোড দুপুরের পরই হয়ে উঠে জনসমুদ্র। গীতাঞ্জলি, দেওয়ান বাজার, শুভ প্লাজা, মফিজ মার্কেট, ক্রিসেন্ট মার্কেটে মানুষের চাপে হিমশিম খেয়েছে দায়িত্বরত মার্কেটের নিরাপত্তাকর্মীরাও।
সোমবার নওগাঁর বিভিন্ন মার্কেটে মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। কর্মদিবস হলেও তরুণ-তরুণীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়। মার্কেটের এক পথ দিয়ে প্রবেশ করে অন্য পথ দিয়ে বের হতেই ঘণ্টা চলে যাচ্ছে।
মদিনা মার্কেটে শাড়ি বিক্রেতা ইন্দ্রজিৎ সরকার ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার অভিজ্ঞতা বলে, এই সপ্তাহ পুরোটাই কম-বেশি মানুষের ভিড় থাকবে। সবচেয়ে বেশি ভিড় হতে পারে আগামী ২২ এপ্রিল শুক্রবার ও ২৩ শনিবার। কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা এখনও কেনাকাটা করেননি এরই মধ্যে করে এরপর বাড়ি চলে যাবেন।
মসজিদ মার্কেটে মেয়েদের থ্রি পিছ বিক্রেতা হাবিব ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, বৈশাখের আগে বিক্রি ভালোই ছিল। তবে সেটা বৈশাখের না ঈদের বোঝা মুশকিল। স্কুল-কলেজ খোলা থাকায় সবাই সন্ধ্যায় মার্কেটে আসছেন। কিনে রাখছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়া মাত্রই বাড়ির উদ্দেশে যাত্রা করবে।
তবে নওগাঁর অভিজাত বিপণিবিতান কাজীর মোড়ে অবশ্য তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। কাজীর মোড়ে অবস্থিত দর্জিবাড়ি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কর্মী বলেন, আমাদের এই এলাকাগুলোতে নির্দিষ্ট দিনে ভিড় বেশি হয় এমন নয়। অভিজাত এলাকার মানুষও সৌখিন, যখন মন চায় তখনই আসে। বৈশাখের আগে কিছু কেনাকাটা হয়েছে, আবার ২০ রোজার পর বেশি হবে জানান। অভিজাত এলাকা বাদে অন্য এলাকাগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় দেখা যাচ্ছে মানুষের।
গীতাঞ্জলি মার্কেটের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘দুই বছরতো ব্যবসা তেমন হয়নি। এবার সবার একটা আগ্রহ রয়েছে কেনাকাটা নিয়ে। আবার ধরেন, রোজায় স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকলেও কেউ কিন্তু আগেই শহর ছাড়ে না। বাড়ি যাইতে যাইতে ১৫ থেকে ২০ রোজা হয়েই যায়। কিন্তু এই বন্ধের সময়ে নিজেরা সময় বের করে আরামে মার্কেট করে ফেলে। এবারতো সেটি হচ্ছে না।’
জানতে চাইলে মিজানুর আরও বলেন, ‘সব স্কুল-কলেজ নাকি খোলা। তাহলে একসাথে ছুটি হলে তখনতো বাড়িও যেতে হবে। তাই এরই মধ্যে সবাই কিনে রাখছেন, ফলে ভিড়ও বাড়ছে।’
নওগাঁর একাধিক মার্কেটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোমধ্যেই মার্কেটের সাপ্তাহিক ছুটি বাতিল করা হয়েছে। অর্থাৎ ঈদের আগ পর্যন্ত মার্কেটে আর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে না।
নওগাঁ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, সব মার্কেটেই সাপ্তাহিক বন্ধ ঈদের আগে আর থাকবে না। নওগাঁয় মার্কেট ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে চালু হয়ে রাতে বন্ধ করতে ১১টা ১২টা বেজে যাচ্ছে।
এমএসপি