ভাগনেকে তুলে নেওয়ার হুমকি কাদের মির্জার
নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ভাগনে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমনকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ৫ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
রবিবার (১৭ এপ্রিল) উপজেলার বামনীয়া বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে কাদের মির্জা তার অনুসারীদের উদ্দেশ্যে বক্তৃতাকালে এ হুমকি দেন।
রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমন কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুসারী হিসেবে পরিচিত এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবাদুল কাদেরের আপন ভাগনে। এদিকে আব্দুল কাদের মির্জা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই।
বক্তৃতায় কাদের মির্জা বলেন, ‘এখানে যারা গত পরশু দিন আমাদের অফিসে হামলা করেছে তারা দুষ্কৃতিকারী। এরা অতীতেও এখানে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে বৈতরণী পাড়ি দিয়েছে। এখন এখানে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে। আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের সাহেব ঈদের পরে কোম্পানীগঞ্জে এসে আমাদের উপজেলা কার্যালয় উদ্বোধন করবেন এবং এখানে দীর্ঘ দিনের অচল অবস্থার অবসান ঘটাবেন। আজকে তারা মন্ত্রীর উদ্যোগকে ব্যাহত করতে এ ঘটনা ঘটাচ্ছে। না হলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য ব্যাপার নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না ‘
রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে উদ্দেশ্য করে আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘একটা পকেটমার, দখলদার, সন্ত্রাসী, জুয়াডি তাকে এখানে মানুষ ভোট দেয়নি। ভোট চুরি করে প্রশাসনের সহযোগিতায় চেয়ারম্যান হয়। এখন চোখে চশমা দিয়ে হাটে কীভাবে এ ছেলে। তোর তুন বড় চেয়াম্যান অগল অড়া হামালি গেছে, তুই কিয়া। সাবধান করে দিয়ের। উড়াই লই যামু ইয়ানতুন, ইয়ানতুন উড়াই লই যামু। উড়াই লই যাই বাপের নাম ভুলাই দিমু। সাবধান। হামালি যাগোই কই দিয়ের। যে ছেলে খেতে পারতনা উপবাস ছিল। আমি টোলে নিয়ে চাকরি দিয়েছি এ ছেলেকে, ঘর আমি করে দিয়েছি। সে এখন বামনী বাজরে চোখে চশমা দিয়ে ডন হইছে। তোর মতো কত ডন কোম্পানীগঞ্জ থেকে বিদায় নিয়েছে। তুই অডা ডন। আমাদের ছেলেদের গায়ের উপর হাত দেচ। কত বড় শক্তি। তোর অডা সন্ত্রাসী হামাল,আর তুই হামালি যা।’
অনুসারী নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কাদের মির্জা বলেন, রোজার মাস আমরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিশ্বাস করি। কোনো যড়যন্ত্রকারীর ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। রোজার মাসে আমরা সংযত থাকব। মানুষ কষ্ট পায় আমরা এ ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হব না। আমাদের কোনো কর্মসূচির দরকার নেই। অফিস ভেঙেছে মামলা দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন কী করে আমরা দেখব। মন্ত্রী আসার পরে কথা বলে আমরা পরবর্তী সিন্ধান্ত নেব। আমরা ছেড়ে দেব না।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘বাদল্লা ডন হামায় গেছে, ঘরে ঢুকি গেছে। হেতে মার্ডার কেছে পড়বে, বাঁচতে পারবে না। যমুনা টিভিয়ে প্রচার করে যে দেখছেননি। ধরা খাই গেছে হেতে ‘
রামপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমন বলেন, তাৎক্ষণিক বিষয়টি আমি নোয়াখালী পুলিশ সুপারকে জানিয়েছি এবং হুমকির ভিডিও চিত্রও পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় আমি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
ভাগনে সালেকিন রিমনের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জা বলেন, আমি তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ। সেখানে কোনো ঘটনা হয়নি। আমাদের ছেলেদের ওপর আক্রমণ করে। উল্টো মিটিং করে ইউএনওকে দোষারোপ করে। আমি কিছু জানি না। গত তিন মাস আমি কারো বিরুদ্ধেও কথা বলি না। গত কয়েক দিন আগে ফেসবুকে লাইভ দিছি। আমি কারো বিরুদ্ধে একটা কথাও বলি নাই। আমি জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কথা বলেছি। আমি এগুলো নিয়ে এখন চিন্তাও করিনি।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মো.শহীদুল ইসলাম বলেন, কোনো অভিযোগ থাকলে ভুক্তভোগীকে থানায় অভিযোগ করতে বলা হয়েছে। আমি ওসিকে বলে দিয়েছি আইনগত ব্যবস্থা নিতে।
গত শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের বামনী বাজারের টোল আদায়কে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমন ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দোকান ভাঙচুরসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১২জন আহত হন। বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজিস সালেকিন রিমন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে এবং মেয়র কাদের মির্জার প্রতিপক্ষ। অপরদিকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী মেয়র কাদের মির্জা সমর্থিত।
এসএন