বাসাইলে চাচা-ভাতিজার টেন্ডারকাণ্ডে কৃষকের কাঁচা ধানে মই!
টাঙ্গাইলের বাসাইল পৌরসভার এক কমিশনারের বিরুদ্ধে কৃষকের কাঁচা ধানসহ ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, টেন্ডারের কাজ নিয়ে চাচা-ভাতিজার বিবাদের কারণে ‘কাঁচা ধানে মই’ দেওয়া হচ্ছে।
দরিদ্র কৃষক শাহনাজ, মমতা, আব্দুর রশিদ, আবুল হোসেন, শহীদ খান, সাজু মিয়া বলেন, আমরা গরীব-অসহায়-দরিদ্র কৃষক মানুষ। ৫০০ টাকা কামলা নিয়া, সার, বিছুন দিয়া ক্ষেত করছি, সেই ক্ষেত কাইটা নিছে। কত কান্নাকাটি করলাম- ভেকুটা লাগায়েন না। আমাদের ক্ষেতগুলা সর্বনাশ হয়েছে। একমাত্র এই জমির ধান থেকেই সারা বছর চলে আমাদের। এখন এই সংসার কিভাবে চালাবো? আমরা কি সরকারের কাছ থেকে কোনো কিছুই পাব না?
এ বিষয়টি নিয়ে পৌরসভা অথবা অন্য কোথাও অভিযোগ দিলে তাদের দেখে নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাসাইল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচএম এরশাদ আলম।
পৌরসভা ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ মার্চ 'টি-টেন' প্রকল্পের আওতায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বর্নীকিশোরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রিজ থেকে আকতারের বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ মিটার কাঁচা রাস্তায় মাটি ফেলে দুপাশে ১০ ইঞ্চি গাইডলসহ 'এইচবিবি' কাজের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। কাজটির ব্যয় ধরা হয় ৩১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা।
৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরশাদের ভাতিজা মো. আরিফ মিয়ার মালিকানাধীন মেসার্স শারমিন এন্টারপ্রাইজ কাজটি পেলেও কমিশনার নিজে কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব নেন। এলাকায় প্রচার করা হয়, রাস্তার কাজটি তিনি পেয়েছে এবং রাস্তায় সাইড বাই সাইড মাটি নেওয়ার নির্দেশ আছে। যে মাটি দেবে না তার বিরুদ্ধে মামলা হবে।
যদিও ওই টেন্ডারের কাজে পিডির অনুমোদন এবং ওয়ার্ক অর্ডারসহ অফিসিয়াল আনুষাঙ্গিক কাজগুলো এখনো প্রক্রিয়াধীন।
তবে কাউন্সিলর এরশাদ নানা প্রপাগন্ডা প্রচার করার ক’দিন পর থেকেই ওই রাস্তার পাশের বোরো ধানের ক্ষেতে ভেকু বসিয়ে মাটি কাটা শুরু করেন।
রাস্তাসংলগ্ন জমির মালিক দরিদ্র কৃষকরা ও এলাকাবাসী কার্যাদেশ এবং অফিসিয়াল নির্দেশ পর্যন্ত অপেক্ষা এবং থোর ধান না কেটে বোরো মৌসুম শেষ হলে মাস খানেক পর মাটি নেওয়ার অনুরোধ করেন।
এরপরও মন গলেনি এরশাদের। তিনি থোর ধানসহ মাটি কাটা শুরু করেন। কৃষকরা বাধা দিলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন কাউন্সিলর এরশাদ। ভয়ে হতদরিদ্র কৃষকরা কোথাও অভিযোগ করেননি।
৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এইচএম এরশাদ আলমের সঙ্গে তার কার্যালয়ে কথা বলতে গেলে সাংবাদিকদের দেখেই তিনি কৌশলে পালিয়ে যান। পরে তার মুঠোফোন নম্বরে ফোন করলে সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কল কেটে দেন তিনি।
বাসাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, আমরা ক্ষতিপূরণের জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ক্ষতিপূরণ চেয়ে আবেদন করলে ইউএনও মহোদয়ের নির্দেশে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে দিতে পারি।
এ বিষয়ে বাসাইল পৌরসভার প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোশারফ হোসেন বলেন, বোরো ধানের জমি থেকে মাটি কাটার সঙ্গে টেন্ডারের আইনি কোনো সম্পর্ক নেই। টেন্ডারে শারমিন এন্টারপ্রাইজ লটারিতে উইনার হয়েছে। নিয়মানুসারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।
পৌর মেয়র আব্দুর রহিম আহমেদ বলেন, বোরো ধানসহ জমির মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কোনো অভিযোগ আসেনি। আমরা কোনো ওয়ার্ক অর্ডার দেইনি। কোনো রাস্তায় যদি কেউ অনুমতি ছাড়া মাটি ফেলে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা পারভীন বলেন, এ সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা আমাকে জানালে ওখানে সরজমিনে গিয়ে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
টাঙ্গাইলের ১০টি পৌরসভার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) দেলোয়ার হোসেন মজুমদার বলেন, ওই কাজের কন্ট্রাকই এখনো সাইন হয়নি। কন্ট্রাক সাইন না হলে তো কাজ বাস্তবায়নের কোনো প্রশ্নই আসে না।
এমএসপি