মুক্তিপণের দাবিতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ: স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬
পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ব্যবসায়ীকে অপহরণ মামলায় স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৬ এপ্রিল) পটুয়াখালী ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন-জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান পারভেজ, শামীম আহম্মেদ, আক্তারুজ্জামান সুমন, মিজানুর রহমান ওরফে সাবু গাজী, বেল্লাল হোসেন ও সাব্বির আহম্মেদ ওরফে জুম্মান। তারা সবাই পটুয়াখালী শহরের বাসিন্দা।
রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর সোয়া ১টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়টি জানান জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ী শিবু লাল দাস অপহরণের মাস্টার মাইন্ড কাপড় ব্যবসায়ী মামুন ওরফে ল্যাংড়া মামুনসহ তিনজন হলেও পুরো ঘটনার সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ জন জড়িত। ঘটনার পরপরই সবাই আত্মগোপনে চলে যান। তবে আমরা তাদের মধ্যে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করতে পেরেছি। বাকিদেরও শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’
এ সময় অপহরণের ও আসামিদের শনাক্তের বর্ণনা দেন এসপি। তিনি জানান, ১১ এপ্রিল শিবু ও তার গাড়িচালক মিরাজকে অপহরণ করে তাদের হাত, পা ও মুখ বেঁধে গাড়িতে করে শহরের এসডিও রোডে মামুনের গোপন আস্তানায় নিয়ে রাখা হয়। পরদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মাতৃছায়া দোকানের স্টিকার লাগানো প্লাস্টিকের বস্তায় ভরে অটোরিকশায় করে তাদের শহরের সবুজবাগ এলাকার এসপি কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ডে রাখা হয়। ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিবু ও মিরাজকে বস্তাবন্দী অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
এসপি জানান, বস্তার সূত্র ধরেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে। শহরের একাধিক মোড়ের ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরার ফুটেজ ও শিবুর বক্তব্য মিলিয়ে আসামিদের শনাক্ত করা হয়।
তিনি বলেন, ‘আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রথমে অটোচালক মো. বেল্লালকে আটক করি। বেল্লাল জানান-এসডিও রোড থেকে খোঁড়া এক ব্যক্তি সবুজবাগ যাওয়ার জন্য তার অটো ভাড়া করেন। তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন। তারা অটোতে কিছু বস্তা তোলেন। এ সময় বেল্লালকে সিগারেট ও কোক আনতে দোকানে পাঠানো হয়। সবুজবাগের ওই বিল্ডিংয়ের সামনে পৌঁছালে বেল্লালকে তারা আবারও সিগারেট ও কোক আনতে পাঠান। সে সময় তারা বস্তা নামিয়ে ফেলেন।’
এসপি আরও বলেন, ‘মূলত টাকার জন্যই শিবুকে অপহরণ করা হয়েছিল। তবে এর পেছনে অন্য কোনো কারণ থাকলে ল্যাংড়া মামুনকে গ্রেপ্তারের পর তাও বেরিয়ে আসবে। আমরা কোনো কিছুই বাদ দিচ্ছি না। এ ঘটনায় কেউ ছাড় পাবে না।’
এ ঘটনায় গত বুধবার দুপুরে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে পটুয়াখালী সদর থানায় মামলা করেন শিবুর ছোট ছেলে বাসু দেব দাস।
এজাহারে বলা হয়, শিবু ব্যাবসার কাজে গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে শহরের পুরানবাজারের নিজ বাসা থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় তার গাড়িচালক মিরাজ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কাজ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তারা হরিদেবপুর খেয়াঘাটের পাশে তাদের মালিকানাধীন শোভা আবাসিক বোর্ডিংয়ে বিশ্রাম নেন।
এরপর তারা আবার বাসার দিকে যাওয়া শুরু করেন। এর মাঝে আমখোলা বাজারে করিম হাওলাদারের কাছ থেকে গজালিয়া খেয়াঘাটের কালেকশন বাবদ সাড়ে ৭ হাজার টাকা এবং হরিদেবপুর খেয়াঘাটের ম্যানেজার শ্রী শ্যামলের কাছ থেকে ৫২ হাজার ১২০ টাকা নেন।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে পরিবারের সদস্যরা শিবুকে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পায়। গাড়ির চালককে ফোন দিলে তার ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর রাত ১টা ৫৯ মিনিটে শিবুর নম্বর থেকে তার স্ত্রীর ফোনে কল আসে। অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। তার বাবাকে জীবিত অবস্থায় ফেরত পেতে বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য বলা হয়। প্রশাসনকে জানালে তার বাবাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই রাতেই শিবুর পরিবার সদর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানায় ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে।
এরপর পুলিশ আমতলী উপজেলার আমড়াগাছিয়া এলাকার রহমানিয়া তেলের পাম্প থেকে শিবুর প্রাডো গাড়িটি উদ্ধার করে। তারপর এসপি কমপ্লেক্সের আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে শিবু ও মিরাজকেও উদ্ধার করা হয়।
এসআইএইচ