কৃষি জমি কমলেও খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি পড়েনি: পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম এমপি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ না করলে আজ আমরা বাঙালি জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারতাম না এবং বাংলাদেশি হিসেবে স্মীকৃতি লাভ করতে পারতাম না। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ কিন্তু আমরা কৃষি নির্ভরশীল দেশও। আমাদের ছোট একটা দেশ কিন্তু এখন বিপুল জনসংখ্যা। স্বাধীনতার সময় যখন দেশে ৭ কোটি মানুষ ছিল এখন সেখানে ১৭ কোটি মানুষ। কিন্তু আমাদের জমি বৃদ্ধি পায়নি। তারপরও আপনাদের (কৃষকদের) আন্তরিকতা, নিরলস কষ্ট ও আপনাদের সহযোগিতা পেয়ে আজ বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে এগিয়ে যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন গবেষণা করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করায়। আগে যেখানে আমরা একটা ফসল উৎপাদন করতাম, এখন সেখানে দুইটা-তিনটা ফসল উৎপাদন করি। যার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কৃষি জমির পরিমাণ কমে গেলেও খাদ্য উৎপাদনে ঘাটতি পড়েনি।
শনিবার (১৬ এপ্রিল) সকালে বরিশাল সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল আয়োজিত খরিপ-১/২০২২-২৩ মৌসুমে আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, এ দেশ নির্ভর করে কৃষি উৎপাদনের উপরে। বাংলাদেশের উন্নয়ন নির্ভর করে আপনারা যারা কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। আপনাদের হাত শক্ত হলে দেশও শক্ত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনে করতেন কৃষকের উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমেই বাংলাদেশর উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। এ ছাড়াও তার নির্দেশনা ছিল-কৃষক ভাইদের প্রতি খেয়াল রাখার। আর এ লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন।
কৃষকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা যারা কৃষক ভাইয়েরা রয়েছেন, আপনাদের পরিবারের যে সন্তানরা রয়েছেন তারা একত্রিত থাকুন। যখন আপনার ৫ সন্তানকে জমির ভাগ ৫টি করে দেন তখন কেউ না কেউ জমির মাঝখানে ঘর তোলেন। এ রকম করে হিসেব করুন প্রতিনিয়ত কত শতাংশ ফসলি জমি হারাচ্ছে। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে, চিন্তা-ভাবনা করুন এক জায়গাতে থেকে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারলে অর্থনৈতিকভাবে ভালোও থাকবেন এবং ভালো ও সুখী জীবনযাপন করতে পারবেন। যখনই ফসলের জমির পরিমাণ কমে যাবে, উৎপাদনের পরিমাণটাও কমে যাবে। আমার অনুরোধ, আপনার সন্তানদের জমি ভাগ করে দিন কিন্তু বসবাস একসাথে থাকুক। ফসলি জমিটা আপনারা মেহেরবানি করে নষ্ট করবেন না।
এর আগের বক্তাদের বক্তব্যের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আপনারাই বলেছেন বেগম জিয়া ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে তখন সারের দাবিতে ২০ জন কৃষক ভাই আত্মহুতি দিয়েছে, তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখন বিনা পয়সায় বিজ ও সার দিতে চাইলেও লোক নাকি আসে না। এখন ইউরিয়া এক কেজির দাম ধরা হয় ১৬ টাকা, সেটার বাজারে দাম ৯৮ টাকা। সেখানে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৮২ টাকা। আবার টিএসপি সার যেটা সরকার বিক্রি করছে ২২ টাকায়, সেটার বাজারে দাম ৮৭ টাকা আর সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৬৫ টাকা। ডিএপি সার সরকারের পক্ষ থেকে বিক্রি করা হয় ১৬ টাকা করে, যেটার বাজারে দাম ৯৬ টাকা এবং ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে ৮০ টাকা। এমওপির দাম ১৫ টাকা, বাজারের দাম ৬৩ টাকা আর সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে ৪৮ টাকা। তাহলে চিন্তা করেন সরকার আপনাদের ফসল উৎপাদনের জন্য কত সহায়তা করছে।
ভর্তুকি দিয়ে প্রতি বছর একটা করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যেতো বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কৃষি সচিব বলেছেন- প্রতি বছর বাংলাদেশ সরকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে ৩০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। এই ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে শুধু সরকারের জন্য, আমাদের দেশের মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকেন, খেয়ে পরে বেঁচে থাকেন, আমাদের দেশের মানুষ যাতে সাবলম্বী হতে পারে সেজন্য। পেটে ভাত থাকলে কাজ করতে কষ্ট হবে না আর না থাকলে পারবেন না। কৃষি থেকে আজকে আমরা আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এখান থেকে কিছু উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করার প্রক্রিয়া চলছে। আমরা আম, পেয়ারা, সবজি রপ্তানি করছি। এগুলো হলে কৃষিখাতেও বিদেশি মুদ্রা আয় করতে পারব।
জাহিদ ফারুক শামীম বলেন, গ্রামে-গঞ্জে খালি জমি পড়ে থাকে, কৃষক ভাইদের প্রতি অনুরোধ সেসব জায়গাতে ফসল উৎপাদন করুন। জমির মালিক চাষ না করলে বর্গা দিন। এক কড়া জমিও খালি রাখতে দিব না, অনাবাদি রাখব না- এটাই সবার প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিত।
বরিশাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. হারুন অর রশিদ, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আলহাজ্ব মাহমুদুল হক খান মামুন, সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুর রহমান মধু।