বিএসএফ’র বাধায় হচ্ছে না মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধি সংরক্ষণ
প্রায় পনের লাখ টাকার বাজেট দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের জীবন্ত ইতিহাস সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ১৭ সেপ্টেম্বরে। কিন্তু কাজটিতে বাধা আসে ভারতের সীমান্তরক্ষীদের কাছ থেকে। সীমান্তের দেড়শ গজের মধ্যে হওয়ায় আর্ন্তজাতিক সীমানা আইনে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে বিএসএফ।
ছয় বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর রয়েছে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার মাধবখালি সীমান্তে। ভারত সীমান্তে সন্মুখযুদ্ধে পাক বাহিনীকে পরাজিত করে দেশের জন্য জীবন দিয়ে চিরনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন তারা। এই স্মৃতি সংরক্ষণে ১৪ লাখ ৯৭ হাজার ৫৮০ টাকা ব্যয়ে মাধবখালির ছয়জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর। প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর বাধা দেয় বিএসএফ। বন্ধ হয়ে যায় এ কাজ।
সরেজমিন দেখা গেছে, নির্মাণ সামগ্রী পড়ে আছে। বন্ধ আছে কাজ। এলাকাবাসীর দাবি, সরকার যেন ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে অসমাপ্ত কাজটি সমাপ্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গত বছর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর এই প্রথম ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)’র পক্ষ থেকে এই ছয় মুক্তিযোদ্ধার সমাধিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলী জানানো হয়। এদিন বিএসএফ’র ৫৪ সীমানগর ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট দেবরাজ সিং বলেন, ‘অবশ্যই উচ্চ পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে স্মরণীয় এই সমাধি সংরক্ষণের কাজ শেষ করার প্রয়াস নেওয়া হবে।’
এ ব্যাপারে বিজিবি’র চুয়াডাঙ্গা ৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফট্যান্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বলেন, ‘বিএসএফ’র সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা নকশায় একটু পরিবর্তন এনে কাজটি সম্পন্ন করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। বিজিবির পক্ষ থেকে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর কমান্ডার মেজর দত্ত ও বর্ম্মা এবং ৮ নম্বর সেক্টরের বানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোস্তাফিজুর রহমানের (সেনা প্রধান মেজর জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী যৌথভাবে জীবননগরের মাধবখালী সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রবেশ করে এ অঞ্চলে অবস্থানরত পাকবাহিনীর উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে। শুরু হয় রক্তক্ষয়ী প্রচণ্ড যুদ্ধ।
এ সময় রাজাপুর ও মাধবখালী সীমান্তে সন্মুখ সমরে শাহাদৎ বরণ করেন-হাবিলদার আব্দুল গফুর, নায়েক আব্দুল মালেক, আব্দুর রশিদ, সিপাহী সিদ্দিক আলী, আব্দুল আজিজ ও আবু বকর। যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর ২৯ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা যৌথ বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়।
আরকেএল/এএন