আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু: চট্টগ্রামে মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ’৭১ সালে চট্টগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছিল। এই সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশকে মুক্ত করার জন্য আজ থেকে নতুন মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। আসুন, আমরা সবাই মিলে নতুন এই মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
রবিবার (২৭ মার্চ) নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটি আয়োজিত সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
বিএনপি এই সমাবেশের নাম দিয়েছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সূচনা সমাবেশ’। সমাবেশের ব্যানারেও তা লেখা ছিল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারকে পরাজিত করে বাংলাদেশ, গণতন্ত্র ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সমাবেশে আবারও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। এখন দিনের ভোট আগের রাতে হয়ে যায়। সরকার এখন বলছে, সংবিধান অনুসারে নির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তারা নিজেদের ইচ্ছামতো করে কাটাছেঁড়া করে নিজেদের মতো বানিয়ে নিয়েছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী নাকি নির্বাচন হবে। কিন্তু আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, সময় শেষ। যতই ডিগবাজি খান, কোনো লাভ হবে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সরকার হঠাৎ ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিল। মার্কিন মন্ত্রী এসে ধমক দিল আর অমনি সরকার ডিগবাজি খেয়ে ইউক্রেনের পক্ষে ভোট দিয়ে দিল। আসলে এদের কোনো চরিত্র নেই। জনগণের প্রতি ভালোবাসা নেই। এদের পরাজিত করতে হবে। আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রেখেছে। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। খুন-গুমের অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এটা দেশের জন্য লজ্জার, জাতির জন্য লজ্জার। অথচ আওয়ামী লীগের নির্দেশেই এসব খুন-গুমের ঘটনা ঘটেছে। তীব্র গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে। সব রাজনৈতিক, সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
সমাবেশে পুলিশকে জনগণের বাহিনী উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় আপনাদের বেতন হয়। সাবধান হয়ে যান। অশালীন কথা বলবেন না, জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আওয়ামী লীগ চিরদিন ক্ষমতায় থাকবে না। সেদিন জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করলে এ দেশের মানুষ ক্ষমা করবে না।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, বীর চট্টলা থেকে বীরপুরুষ শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর আমরা পার করেছি। এই ৫০ বছরে আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করেছে। ইতিহাস থেকে জিয়াউর রহমানকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মুছতে পারেনি। কারণ জিয়াউর রহমান আমাদের হৃদয়ে আছেন, এদেশের মানুষের হৃদয়ে আছেন।
আরও পড়ুন: কালুরঘাট যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার মুখে মির্জা ফখরুলরা
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, মেজর জিয়াউর রহমান যে কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ষোষণা করেছিলেন এবং সেই ঘোষণা শুনে বাংলাদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সেই স্থানে আমরা যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পেটুয়া বাহিনী আমাদের সেখানে যেতে দেয়নি।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই। সকল বিদেশি গণমাধ্যমে সেদিন শহিদ জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা প্রকাশিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতাদের বইয়েও মুক্তিযুদ্ধের সূচনার কথা লেখা আছে। বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সেদিন শুনেছিলেন। আজ আমাদের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি। ঘোষণা দিচ্ছি, আমরা প্রত্যেক বছর চট্টগ্রামে ২৭ মার্চ পালন করব। আগামী বছর ২৭ মার্চ কালুরঘাট বেতারকেন্দ্রের সামনে পালন করব।
বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন উদযাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আবদুস সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জয়নাল আবদিন ফারুক ও গোলাম আকবর খোন্দকার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।
এমএসপি