রংপুরে বুলবুলের ছবি হাতে নিয়ে মায়ের আহাজারি
মৃত্যুর খবর শুনে ছেলের ছবি হাতে নিয়ে আহাজারি করেই যাচ্ছেন মা বুলবুলি বেগম। ঘরের ভেতরে কাঁদছিলেন একমাত্র বোন লাভলী সামাদ। আসন্ন রমজানেই বাড়ি আসার কথা ছিল দন্ত চিকিৎসক ডা. আহমেদ মাহী বুলবুলের। কিন্তু রমজান শুরুর আগেই দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে অকালে প্রাণ গেছে তার। এখন বুলবুলের নিথর দেহটির অপেক্ষায় অশ্রুসিক্ত প্রহর গুনছেন মা-বোনসহ স্বজনরা।
রবিবার (২৭ মার্চ) ভোরে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে নিহত হয়েছেন গরিবের ডাক্তার হিসেবে পরিচিত আহমেদ মাহী বুলবুল। তার বাড়ি রংপুর নগরীর ভগিবালাপাড়ায়। ৪০ বছর বয়সী চিকিৎসক বুলবুল ‘ভূমি’ নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতেন।
বরিবার দুপুরে রংপুরে বুলবুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তার বিধবা মা’র অশ্রুসিক্ত নয়ন। এ সময় জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল (শনিবার) রাত সাড়ে ১০টার দিয়ে ছেলের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছি। ওর বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে মোবাইলে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিল সে। ২০ রমজানে বাসায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কোথা থেকে কী হয়ে গেল, কিছুই বুঝতে পারছি না।
হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, প্রশাসন একটু খতিয়ে দেখলে আসল ঘটনা বের হবে। মোবাইল ফোন ঘেঁটে দেখুক। আমার ছেলের তো কোনো শক্র নেই। তারপরও এ ঘটনা কেন ঘটলো? ছেলের খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।
নিহতের ছোট ভাই আহমেদ রাহি বকুল জানান, ঢাকায় ভাই বুলবুলের ঠিকাদারী কাজ দেখতেন তিনি। গত মাসে বুলবুল রংপুরে এসে ঘুরে গেছেন। এর কিছু দিন পর বকুল রংপুরে আসেন। হঠাৎ দুর্বৃত্তরা কেন এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনরা।
ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, আমার এলাকার একজন মিস্ত্রি আমার বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢাকায় থাকেন। উনার স্ত্রী সকালে এসে আমাদের ভাইয়ের অসুস্থতার কথা বললেও পরে ছোট ভাই বকুলের কাছে ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি জানান।
কাঁদতে কাঁদতে তিনি আরো বলেন, এটি পরিকল্পিত ঘটনা হতে পারে। এর সঙ্গে পরিচিতদের কেউ জড়িত থাকতে পারে। তা না হলে এতো সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার খবর পেল কীভাবে? আমার ভাই আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। ঢাকায় দন্ত্য চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে তার নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। তার মৃত্যুতে এখন ভাবী এবং দুই শিশু সন্তান কীভাবে দিন পাড় করবেন?
এদিকে, স্থানীয় কাউন্সিলর গাফফার হোসেন বলেন, সকালে বুলবুলের মৃত্যুর খবরটি জানতে পেরেছি। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক।
তিনি বলেন, ছেলে হিসেবে ডা. বুলবুল খুব ভালো ছিলেন। ঢাকায় বিএনপি নেতা হাবিব উন-নবী খান সোহেলের সঙ্গে তার ওঠাবসা ছিল। তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনার নেপথ্যে জড়িতরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশে নাকি অন্য কোনো কারণে তাকে ছুরিকাঘাত করেছে, সেটা প্রশাসনকে বের করতে হবে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আহমেদ মাহী বুলবুল দিনাজপুর জেলায় বিয়ে করেন। তিনি স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার আট বছরের মেয়ে আহমেদ আফনা নাউন এবং সামি নামে দেড় বছর বয়সী ছেলে সন্তান রয়েছে।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ময়না তদন্ত-সহ সব আইনী প্রক্রিয়া শেষে বুলবুলের মরদেহ রংপুরে আনা হবে বলে জানান পরিবারের লোকজন।
ডা. আহমেদ মাহী বুলবুলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে তিনি মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্টমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকায় চলে যান। সেখানে মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে পড়াশোনা করেন। মগবাজারে রংপুর ডেন্টাল নামে একটি চেম্বার খুলে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। শুধু স্বাবলম্বীদের কাছ থেকে ফি নিতেন। এর বাইরে তিনি ঠিকাদারি কাজ করতেন।
এমএসপি