সৌর বিদ্যুতের সেচ প্রকল্প স্থাপন কাজে বাঁধা, ক্ষতির আশঙ্কায় কৃষকরা
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে প্রান্তিক কৃষকদের সুলভে সেচ নিশ্চিতকরণে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ প্রকল্প শুরু করেছে সরকার। তবে একজনের বাঁধার মুখে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপন করতে পারছেন না স্ক্রীম চাষী ও সাবেক ইউপি সদস্য নাসরিন কামাল।
জানা গেছে, চলতি সেচ মৌসুমে দেশের ২১ জেলায় দুই হাজার সৌর বিদ্যুৎ চালিত অগভীর সেচ পাম্প চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের গোপালপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী ও ঘাটাইল উপজেলায় শতাধিক সৌর সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস-১)। এ ছাড়াও উপজেলায় সৌর বিদ্যুৎ চালিত ১১টি সেচ প্রকল্প চালুর কাজ চুড়ান্ত করা হয়।
তবে উপজেলার জ্যোত আতাউল্যা গ্রামে সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প স্থাপনে বাঁধা দেন স্থানীয় প্রভাবশালী রঞ্জু মিয়া। এতে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত গত ৮ মার্চ প্রকল্পটি চালু করা যায়নি।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য ও সৌর বিদ্যুৎ সেচ প্রকল্পের স্ক্রীম চাষী নাসরিন কামাল জানান, সৌর বিদ্যুতের জন্য পল্লী বিদ্যুত থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরে পল্লী বিদ্যুতের লোকজন সৌর বিদ্যুত প্রকল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে এলাকায় গেলে তাদের বাঁধা দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এ ছাড়াও সেখানে ডিজেল চালিত নলকূপ স্থাপন করেছে রঞ্জু নামের এক প্রভাবশালী। এ সময় পল্লী বিদ্যুতের লোকজনের উপর চড়া হয় রঞ্জু। এতে বাধ্য হয়ে বিদ্যুত অফিসের লোকজন যাবতীয় সরঞ্জাম রেখে ফিরে আসে। এ ঘটনায় উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতির নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এরপর গত ১০ ফেব্রুয়ারি ওই ব্যক্তিকে তিন দিনের মধ্যে ডিজেল চালিত সেচ পাম্প মাঠ থেকে অপসারণ করার নির্দেশ প্রদান করে প্রশাসন। কিন্তু এখন পর্যন্ত ডিজেল চালিত পাম্প সরাননি তিনি।
এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে রঞ্জু মিয়া বলেন, কৃষকদের অবহিত না করেই নাসরিন কামাল সৌর বিদ্যুতের সেচ প্রকল্প এনেছেন। কৃষকরা নাসরিন কামালের অধীনে সেচ কার্যক্রমের সেবা গ্রহণ করবে না। এছাড়া আমার বাবার নামে সেচ প্রকল্পের লাইসেন্স রয়েছে। প্রশাসন থেকে আমার ডিজেল চালিত সেচ পাম্প সরানোর জন্য বলা হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটার বিষয়ে প্রশাসনের কাছে জবাব দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের স্থানীয় উপ-সহকারি প্রকৌশলী রোমান মিয়া জানান, ভূগর্ভস্থ সেচ নীতিমালা ১৯৮৫ মোতাবেক একটি অগভীর নলকূপ থেকে আরেকটির দূরত্ব থাকার কথা ৮২০ ফিট। আর সেই সেচ নীতিমালা মাঠ পর্যায়ে দেখার মূল দায়িত্ব উপজেলা সেচ কমিটির।
এ বিষয়ে উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভেজ মল্লিক জানান, প্রধানমন্ত্রীর সৌর বিদ্যুৎ চালিত সেচ প্রকল্পে যাতে কেউ বাধা দিতে না পারে এ জন্য প্রশাসন সজাগ রয়েছে। সৌর সেচ প্রকল্প স্থাপনে বাঁধা দেয়ার বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সেখানে একটি ডিজেলচালিত সেচ পাম্প সরানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গোপালপুর জোনের সহকারি জেনারেল ম্যানেজার এম তাহসীন ইলিয়াস জানান, সৌর সেচ প্রকল্পের জন্য উপজেলায় ১২টি স্কীমের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ১১টি প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা। কিন্তু প্রথমেই নাসরীন কামালের কাজ করতে গিয়ে বিপত্তির মুখে পড়ে। রঞ্জু নামের ওই গ্রামের এক ব্যক্তি সেচ কমিটির নির্দেশ মানছেন না।
ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জি এম আখতার হোসেন জানান, সুলভে সেচ নিশ্চিতের জন্য সরকার এবং এডিবির অর্থায়নে বিপুল পরিমাণ টাকা ভর্তুকি দিয়ে সৌর সেচ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মোতাবেক নারী ক্ষমতায়তনের লক্ষে কিস্তির মাধ্যমে গ্রামীণ নারীদেরকে এ প্রকল্পে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এতে জোত আতাউল্ল্যা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য নাসরীন কামাল স্ক্রীম ক্রয় করেছেন।
তিনি আরো জানান, সেচ মৌসুম শেষ হলে এসব সেচ প্রকল্পে উৎপাদিত সৌর বিদ্যুৎ বিশেষ ব্যবস্থায় জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে গ্রিডে বিদ্যুৎ বিক্রি করে একজন স্কীম চাষী বছরে সর্বনিম্ন ৩৩ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়তি আয় করতে পারবেন। কিন্তু প্রারম্ভেই নানা বাঁধা-বিপত্তির শিকার হচ্ছে সরকারের এই লাভজনক প্রকল্প।
এসআইএইচ