নদীর বালু রাস্তায় রেখে বিক্রি, ভাঙছে সড়ক-মহাসড়ক
জামালপুরে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রির জন্য জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়ক ও কানিল-পিয়ারপুর সড়কের উপর বসে অর্ধশত বালুর হাট। এতে বালুবাহী ভারী ট্রাকের কারণে ভেঙে যাচ্ছে সদ্য নির্মিত ধ্বংস হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। অন্যদিকে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে দ্রুতগতির যানবাহন। ঘটছে হতাহতের ঘটনা।
জানা গেছে, জামালপুর শহরের ফেরিঘাট থেকে শুরু করে পিয়ারপুর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে স্থানীয় শক্তিশালী একটি সিন্ডিকেট। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে বালুখেকোরা নদীতে অসংখ্য ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, মাহিন্দ্র ও ভটভটি দিয়ে অবৈধভাবে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বালু উত্তোলন ও পাচার করছে। ব্রহ্মপুত্র সেতুর গোড়া, জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ, শহরের বাইপাস ও মহাসড়কের খুব কাছ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ওইসব স্থাপনা পড়েছে হুমকির মুখে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকার রাস্তাঘাট, হাটবাজার, বাড়িঘর, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ ফসলি জমিও হুমকির মুখে পড়েছে।
ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জামালপুর ফেরিঘাট থেকে মহেষপুর কালীবাড়ি ও কানিল থেকে পিয়ারপুর পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কের অন্তত অর্ধশত স্পটে কোথাও সড়কের পাশে কোথাও সড়কের উপর বালু স্তূপ করে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখান থেকে বালু ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, মাহিন্দ্র, ভটভটিসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে যাচ্ছে নানা স্থানে।
স্থানীয়রা জানায়, সদ্য নির্মিত জামালপুর-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর বিভিন্ন ভারী যানবাহন দাঁড় করিয়ে ২৫ থেকে ৩০ টন বালু বোঝাই করা হয়। শত শত ট্রাক, ড্রাম ট্রাকসহ ভারী যানবাহন দিনরাত চলাচল করায় ভেঙে যাচ্ছে সদ্য নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক।
নান্দিনা এলাকার বাসিন্দা ছাইদুর রহমান বলেন, রাস্তার উপর বালুর হাটের কারণে ধ্বংস হচ্ছে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক। এ ছাড়া সড়কের ওপর বালুর স্তূপ ও ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকায় প্রায় দিনই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক বিভাগ জেনেও পদক্ষেপ নিচ্ছে না। রাতে রাস্তায় বালু বোঝাই ট্রাক সড়কে দাঁড়িয়ে থাকায় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কালেভদ্রে অভিযান চালালেও দিনমজুর ও পরিবহনচালক ছাড়া বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় না।
এ প্রসঙ্গে শরিফপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম আলম বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে ওই চক্রের সদস্যদের নামের তালিকাসহ প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকার মেলেনি। অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা পাকা সড়কের উপর বালুর হাট-বাজার বসিয়ে সড়ক ধ্বংস করলেও সড়ক বিভাগ বরাবরই নীরব।
জামালপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী পঙ্কজ ভৌমিক বলেন, সড়কের উপর বালুর হাট-বাজার তিনি নিজ চোখে দেখেছেন। এ ব্যাপারে ইউএনওর সঙ্গে কথাও বলেছেন। তবে এখনও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জামালপুর সদর ইউএনও লিটুস লরেন্স চিরান জানান, তারা সড়ক বিভাগ থেকে অভিযোগ পাননি। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ পেয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই সব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফ্ফর হোসেন সিআইপি বলেন, বালু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এই বালু পরিবহনে ব্যবহার করা হচ্ছে ২৫-৩০ টন ওজনের ট্রাক, ড্রাম ট্রাক, মাহিন্দ্র। ফলে নষ্ট হচ্ছে শত শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়ক-মহাসড়ক। বিষয়টি নিয়ে তিনি জেলা-উপজেলা প্রশাসনের একাধিক মাসিক সভায় আলোচনা করেছেন। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে তিনি ডিসি ও ইউএনওকে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও রাস্তার উপর বালু রেখে বিক্রি বন্ধ না হওয়াটা দুঃখজনক।
এসআইএইচ