দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে দুই এমপির ভাই-ভাতিজা
বামে আলী মুনসুর বাবু এবং ডানে নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার । ছবি: সংগৃহীত
আগামী ৮মে ১ম ধাপে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও জীবননগর উপজেলায় ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন দিচ্ছেনা। আবার দল থেকেও দেওয়া হয়েছে কঠোর নির্দেশনা। নির্দেশনায় বলা হয় কোন সংসদ সদস্যের নিকটাত্মীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতে পারবেন না। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন দৃশ্য।
দলীয় সিদ্ধান্তের তোয়াক্কা না করে চুয়াডাঙ্গার উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হয়েছেন দুই সংসদ সদস্যের ভাই-ভাতিজা।
এদের একজন চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের আপন ভাই এবং দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মুনছুর বাবু। তিনি ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হয়ে আনারস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
অপরজন চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের আপন ভাইয়ের ছেলে জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার। তিনি ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়েও বৈধ হয়েছেন। এর আগে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
আলী মুনছুর বাবু ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছিলেন। সে সময় সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ গ্রহণ না করে বিদ্রোহী প্রার্থী তার ভাইয়ের পক্ষে ভোটে অংশ গ্রহণ করায় সে সময়কার দলীয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল আলম ঝন্টুকে পরাজিত হতে হয়েছিল। সংসদ সদস্য টগর নিজে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হলেও অন্য নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তিনি ভিন্ন আচরণ প্রদর্শন করেন। এর ফলে সেই সময় থেকে দল দ্বিধা দন্দে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান,সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর নৌকা প্রতীক নিয়ে চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নির্দেশে চলেন তার ভাই ও আত্মীয়স্বজনরা।
অপর দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী সংসদ সদস্যের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক হাউলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহিদুল ইসলাম দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
যা বলছেন প্রার্থীরা
এদিকে দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেন দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম। তিনি সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। দামুড়হুদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলাম বলেন,‘আমি চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগরের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। তাই দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে নিজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেছি।’
সংসদ সদস্য টগরের ছোট ভাই আলী মুনছুর বাবু জানান, রানিং চেয়ারম্যান আছি বলেই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। গতবার দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছিলাম। যারা চেয়ারম্যান ছিল তারা সবাই ভোট করছে, তাই আমিও এবার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি। শুধু নাটোরে একজন নির্বাচন থেকে সরে গেছেন। সবাইতো ভোটের মাঠে আছে ।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার বলেন, ‘গতবার উপজেলা নির্বাচনে ভোট করেছিলাম, সেবার এমপি সাহেব আমার বিপক্ষে ছিল। এবারও আমার বিপক্ষে রয়েছেন। মাঠের পরিস্থিতি ও জনগনের চাপে ভোট করছি।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত মৌখিক গণমাধ্যমে এসেছে। কার্যনির্বাহী কমিটির সভা আহবান করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওখানে সিদ্ধান্ত হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত হওয়ার পর বিষয়টি বোঝা যাবে। কারা থাকবে আর কারা থাকবেনা ।’
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস, জেলা যুবলীগের আহবায়ক নঈম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রহমান।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিন্দ্বীতা করছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মামুন-অর-রশীদ আঙ্গুর, পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিরাজুল ইসলাম কাবা, সাবেক ছাত্রলীগ কর্মী শামীম হোসেন মিজি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান সাহাজাদী মিলি,সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান নুরুন্নাহার কাকলী ও মাসুমা খাতুন।
আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৯ টি ভোট কেন্দ্রের ৭৪০ টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে। এখানে ১ লাখ ৩১ হাজার ৪৩৭ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৩২ হাজার ৪০৮ জন মহিলা ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন দর্শনা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান আলী মুনছুর বাবু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক এস.এ.এম.জাকারিয়া আলম ও দামুড়হুদা উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক এ্যাডভোকেট আবু তালেব বিশ্বাস।
ভাইস চেয়ারম্যান পদে শফিউল কবির ইউসুফ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাহিদা খাতুন ও তানিয়া খাতুন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৯৬ টি কেন্দ্রের ৭০০টি ভোট কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে প্রথম ধাপে ৮ মে। এখানে ১ লাখ ২৪ হাজার ৮৭৯ জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ২২ হাজার ৯৪১ জন মহিলা ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।