মেডিকেলে চান্স পেলেন চর্মকারের ছেলে, টাকার অভাবে দুশ্চিন্তায় বাবা
ছবি: সংগৃহীত
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা খানপুর ঋষি পল্লীর অসিত দাস। পেশায় একজন চর্মকার। কঠোর দারিদ্র্যের সঙ্গে সংগ্রাম করেও সন্তানকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন ছিল চর্মকার অসিত দাসের। আর সেই স্বপ্নই যেন পূরণ করলেন ছেলে অপু দাস।
চলতি শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন অপু দাস। বাবা অসিত দাস চরম অভাবের সঙ্গে লড়াই করে সড়কের পাশে চটে বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন। জুতা সেলাইয়ের সেই প্রতিটি বুননে লুকিয়ে রাখতেন ছেলেকে চিকিৎসক বানানোর স্বপ্ন। আজ সেই স্বপ্নের প্রথম সোপান ভর্তিযুদ্ধে উৎরে গেছেন ছেলে অপু দাস। শত বাধা-বিপত্তিকে জয় করে অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের কাছে হার মেনেছে দরিদ্রতা। কিন্তু তারপরও চিন্তিত অসিত দাস। ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর খরচ যোগাবেন কীভাবে ?
অপুর বাবা অসিত দাস জানান, দুই ছেলের মধ্যে অপু দাস ছোট। বড় ছেলে তিতাস দাস কেশবপুর সরকারি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছে। পাশাপাশি মণিরামপুর পৌরশহরের একটি ইলেকট্রিক দোকানে মেকানিকের কাজ করে। ছোটবেলা থেকেই অদম্য মেধাবী অপু দাস। পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে বাবা-মা রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি করে ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছেন।
অপুর বাবা ছোটবেলা থেকেই জুতা সেলাই আর কালির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রায় ৪০ বছর আগে চরম অভাবের কারণে কাজের সন্ধানে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে মণিরামপুরের বালিয়াডাঙ্গা খানপুর গ্রামে আসেন। সাধনা দাসকে বিয়ে করে ওই গ্রামেই থেকে যান। রাজারহাট-চুকনগর মহাসড়কের পৌরশহরের রাজগঞ্জ মোড়ের পাশে চটের ওপর বসে জুতা সেলাই ও কালির কাজ করেন তিনি। শাশুড়ির দেওয়া তিন শতক জমির ওপর কোনো রকম ঘর বেঁধে বসবাস করছেন।
অপু দাস ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। স্থানীয় ঋষি পল্লীর ব্র্যাক সেন্টার থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করে মণিরামপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০২০ সালে এসএসসি ও ২০২২ সালে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পান। চলতি ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫ নম্বর পেয়ে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
অপুর বাবা অসিত দাস বলেন, ‘জুতা সেলাই ও কালি করে যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। তারপরও ছেলেদের পড়ালেখা শিখাচ্ছি। শুনেছি ডাক্তারি পড়তি মেলা (বেশি) খরচ। এহন এই টাহা কোনে পাবানে, তাই নিয়ে চিন্তায় আছি।’
অপু দাস বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবো। দুঃখী-অসহায় মানুষের সেবা করবো। ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়েছি। সামনের দিনগুলি কীভাবে যাবে? দরিদ্র বাবা-মা কীভাবে আমার ডাক্তারি পড়ার খরচ জোগাড় করবে, তা নিয়ে মহাচিন্তায় আছি।
অপুর মা সাধনা দাস বলেন, ‘আমার অপু ডাক্তার হবে, শুনে আনন্দ লাগছে। সমাজের অন্য দশজন ছেলের মতো অপুকে কাপড়-চোপড়, বই-খাতা কিনে দিতি পারিনি। আমাগের জমি-জমাও নেই। ওরে কীভাবে ডাক্তারি পড়াবো তা নিয়ে ভাবছি। ওর বাবা রাস্তায় জুতা সেলাই আর কালি করে।’
প্রতিবেশী মিলন দাস বলেন, অপু পড়ালেখা ছাড়া কিছুই বোঝে না। ও ডাক্তার হবে শুনে তারা খুব আনন্দিত।
অপুর শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ বাবুল আক্তার বলেন, কঠোর অধ্যবসায় আর ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সব কিছু জয় করা যায়, তার উদাহরণ অপু দাস। ডাক্তারি পড়তে তার সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।