খানজাহান আলী দীঘির কুমিরের ডিমের বাচ্চা ফোটা নিয়ে শঙ্কা

বাগেরহাটের হযরত খানজাহান আলী (রহ.) দীঘিতে থাকা মিঠাপানির মা কুমির ৫৮টি ডিম পেড়েছে। তবে এবারও এই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কারণ এর আগে অনেকবার এই মা কুমির ডিম পাড়লেও, কোনো বাচ্চা ফোটেনি। এভাবে বাচ্চা না হলে কুমিরের বংশ বাড়বে না। মাজারের দীঘি থেকে মিঠাপানির কুমির হারিয়ে যাবে।
খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের খাদেম বিনা ফকির বলেন, আমার বাড়ির পাশে মা কুমির প্রায় ৫৮টি ডিম পেড়েছে। তবে ডিমগুলো কবে পেড়েছে তা তিনি বলতে পারেন না। কয়েকদিন হলো ডিমগুলো আমাদের চোখে পড়েছে।
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, কুমিরটি দীঘির পূর্ব পাড়ে ডিম পেড়েছে। এই নিয়ে অনেকবার এই মা কুমির ডিম পেড়েছে। কিন্তু কখনো বাচ্চা হয়নি।
বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার দপ্তর মূলত গৃহপালিত প্রাণী নিয়ে কাজ করে। তাই খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের কুমিরের ডিম থেকে কেন বাচ্চা হচ্ছে না তা বলতে পারছি না।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, করমজলের কুমিরের বেলায়ও এমন সমস্যা দেখা দিয়েছিল। পরে কুমির পরির্তন করে দেওয়ায় আবার এখানে কুমিরের ডিম থেকে বাচ্ছা পাওয়া যাচ্ছে। খানজাহান আলী (রহ.) মাজারের কুমিরের বয়সের কারণে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় দীঘিতে থাকা মিঠাপানির কুমির দুটি বার বার ডিম দিলেও কোনো বাচ্চা হচ্ছে না। এ ছাড়া সেখানে থাকা কুমিরদের খাবারের বিষয়ে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। মাজারে আসা ভক্ত ও দর্শনার্থীরা খাবার হিসেবে যে যার মতো চর্বিযুক্ত মাংস দেন। ফলে কুমির দুইটির পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেছে। বাচ্চা না ফোটার এটাও অনেক বড় কারণ। তবে নতুন করে অল্প বয়সী দুইটি নারী-পুরুষ কুমির দীঘিতে ছাড়তে পারলে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব বলে মনে করেন।
খ্রিস্টীয় ১৪ শতকের প্রথম দিকে সুলতানী শাসন আমলে হযরত খানজাহান আলী (রহ.) বাগেরহাটে ‘খলিফাতাবাদ’ নগর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় তিনি ৩৬০টি দীঘি খনন করেন। এর মধ্যে সব থেকে বড় ‘ঠাকুর দীঘি’র আয়তন ৩৬০ একর। এই দীঘির পাড়ে তার সমাধি রয়েছে। এই দীঘিতে তিনি দুইটি মিঠাপানির প্রজাতির কুমির এনেছিলেন। যাদের নাম ছিল ‘কালাপাহাড়’ ও ‘ধলাপাহাড়’। খানজাহানের (রহ.) মৃত্যুর পর মাজারের খাদেম ও ভক্তরা ওই কুমির ২টিকে নিয়মিত দেখভাল করতেন। ওই কুমির যুগল বংশ বিস্তার করে আসছিল। এক পর্যায় এই দীঘির কুমির মারা যেতে যেতে শেষে মাত্র ২টি কুমির ছিল। মাজারের দীঘিতে মিঠাপানির কুমিরের বংশ বিস্তারের জন্য ২০০৫ সালে ভারতের মাদ্রাজ থেকে ছয়টি কুমির এনে এখানে ছাড়া হয়। মাদ্রাজি কুমির হিংস্র প্রকৃতির ছিল। তাদের মারামারির কারণে ‘কালাপাহাড়’ অসুস্থ হয়ে পড়ে ২০০৬ সালে কুমিরটি মারা যায় এবং ২০১৫ সালে কুমির ”ধলা পাহাড়” এর মৃত্যু হয়। এর মধ্য দিয়ে খানজাহান আলী (রহ.) -এর আমলের কুমির যুগের সমাপ্তি ঘটে। মাদ্রাজ থেকে আনা ৬টি কুমিরের ৪টি কুমির মারা যায়। বর্তমানে মাজারের দীঘিতে দুইটি কুমির রয়েছে। এই কুমির প্রতি বছর ডিম দিলেও তা থেকে বাচ্চা পাওযা যাচ্ছে না।
এসএন
