বৈশাখকে রাঙাতে ব্যস্ত মৃৎশিল্পীরা
এক সময় গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে রান্না থেকে শুরু করে খাওয়া-দাওয়া আর অতিথি অ্যাপায়ণসহ অধিকাংশ কাজেই মাটির তৈরি পাত্র ব্যবহার করা হতো। স্বাস্থ্যকর আর সহজলভ্য ছিল বলে সব পরিবারেই ছিল এই মৃৎশিল্পের ব্যবহার। কিন্তু, কালের বিবর্তনে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্প।
এই শিল্পের চাহিদা বছরের অন্যসব সময়ে না থাকলেও পহেলা বৈশাখের উৎসবে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কদর বেড়ে যায়। চৈত্রের রৌদ্রদগ্ধ দিন জানান দিচ্ছে দরজায় কড়া নাড়ছে পহেলা বৈশাখ। আর সেই উৎসবকে ঘিরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সাতক্ষীরায় হারিয়ে যেতে বসা এই মৃৎশিল্পের অল্পসংখ্যক কারিগররা।
বর্তমানে সাতক্ষীরার বাবুলিয়া, সুলতানপুর, গড়েরকান্দা, ইটাগাছা, ধুলিহর, ঝাউডাঙ্গা, তালা উপজেলার নগরঘাটাসহ আরও কয়েকটি এলাকার প্রায় ৪০০ পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তারা পহেলা বৈশাখ ও ঈদ সামনে রেখে তাদের দক্ষ হাতের সুনিপুণ নৈপুণ্যে তৈরি করছেন মাটির তৈরি হাড়ি, কলস, ঢাকনা ও ঘর সাজানোর উপকরণসহ নানা ধরনের তৈজসপত্র।
এ ব্যাপারে জেলার একাধিক কুমার জানান, বংশ পরম্পরায় ও জীবিকা নির্বাহের তাগিদে এখনো মৃৎশিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন তারা। দূর-দূরান্ত থেকে সংগ্রহ করা এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করা পাত্রগুলোকে প্রথমে রোদে শুকিয়ে আগুনে পোড়ানো হয়। পরে শিল্পীর নিখুঁত হাতের ছোঁয়ায় রঙের তুলির আঁচড়ে ফোটানো সব চমৎকার নিদর্শন তৈরির পর সেগুলো সাইকেল, ভ্যান বা মাথায় করে দূর-দূরান্তে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতেন তারা। আর তাতেই চলত তাদের সংসার।
তবে বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় ধাতব, মেলামাইন ও প্লাস্টিকের পণ্য সহজে বহনযোগ্য আর সস্তা মাটির তৈরি জিনিসপত্র আজ বিলীন হতে চলেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে শত বছরের ঐতিহ্যগত এই মৃৎশিল্প।'
কুমারদের দাবি, তৈরি করা মাটি, উপকরণ ও পোড়ানোর খরচ বেশি হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে অনেক পরিবার।
এসময় তারা বলেন, বৈশাখ মাসটা তাদের পালনী মাস। এজন্য চৈত্র মাসে তাড়াহুড়ো করে কাজ করেন। বৈশাখে মেলা হয় যেখানে তাদের পণ্যগুলো বিক্রি হয়। নতুন বছর শুরুর এই সময়টায় মৃৎশিল্পীদের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি হয় বেশি। এ আয়ের উপরই তাদের বছরের বাকি দিনগুলো চলায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন তারা।
এসএন