সৌদি আরবের দুম্বার ফার্ম করে আলোচিত কামাল

মাগুরায় সৌদি আরবের দুম্বার ফার্ম করে বেশ আলোচিত হয়েছেন সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের কামাল হোসেন। দুম্বা প্রতি পালনের জন্য আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী জায়গার প্রয়োজন। সৌদি আরব ছাড়াও বিশ্বের কয়েকটি দেশে এ দুম্বা প্রতিপালন হয়ে থাকে। সাধারণত এ প্রাণীটি মরুভূমি এলাকায় বেশি প্রতিপালন হয়ে থাকে। অনেকটা শখ করে কামাল মাগুরায় এই প্রথম বারের মতো সৌদি আবরের দুম্বা প্রতিপালন করছেন তার খামারে। কামালের খামারে রয়েছে অস্ট্রেলিয়ার গরু ও ছাগল।
পাশাপাশি তিনি দুম্বা পালনের জন্য তৈরি করেছেন আরেকটি খামার। সেখানে মাটির উপর দেওয়া হয়েছে বালু। আবহাওয়া ও পরিবেশ উপযোগী করে বর্তমানে তার দুম্বার খামারে বড় আকারের রয়েছে ৬টি ও বাচ্চা রয়েছে ৪টি। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে তাদের দেখাশোনা করেন।
কামাল হোসেন বলেন, আমি ৩০ বছর সৌদি আরবে লেবার ও সেলসম্যানের কাজ করি। তারপর বাংলাদেশে ফিরে আসি ২০২১ সালে। এরপর নিজ গ্রামে ১৪ শতক জায়গায় গড়ে তুলি গরু ও ছাগলের ফার্ম। এ খামারে দেশি গরু ও ছাগলের পাশাপশি আমি অস্ট্রেলিয়ান গরু ও ছাগল প্রতিপালন শুরু করি। প্রথম বছরে আমার সাফল্য আসে। একে একে আমার ফার্মে গরু ও ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি দুম্বার খামার করার ইচ্ছা পোষন করি। কারণ আমি অনেক বছর সৌদি আরবে থেকেছি।
দুম্বা সাধারণ মরুভূমি এলাকায় বেশি প্রতিপালন করা হয়। কারণ এ প্রাণীর আবহাওয়া পরিবেশের সাথে খাপ খাওনোর না গেলে অনেকটা সমস্যা দেখা যায়। তাই সাহস করে আমি ২০২২ সালে ঢাকা সাভারের এক খামারির মাধ্যমে যোগাযোগ করি দুম্বার জন্য। সে আমাকে আশ্বাস দেয়। তারপর সৌদি থেকে তুর্কীদেশ হয়ে ভারতে আসে দুম্বা। তারপর ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে আমি আমার গ্রামে নিয়ে আসি ২টি দুম্বা। বর্তমানে ২টি থেকে দুম্বার সংখ্যা হয়েছে ৬টি।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, আমি দুম্বা প্রতিপালনের জন্য আলাদা ফার্ম করেছি। সেখানে মাটির উপর বালি দিয়ে পরিবেশ তৈরি করেছি। প্রথমে ভয় পেয়েছিলাম এ প্রাণী আমাদের দেশের আবহাওয়া ও পরিবেশের জন্য কতটা খাপ খাইয়ে নিতে পারবে। আমি সৌদি আরবে থাকা কালীন সেখানকার অনেক খামারে গিয়ে দেখেছি তারা কিভাবে পালন করে সেই থেকেই কিছুটা শিখে নিজে ইচ্ছা পোষণ করি প্রতিপালনের।
দুম্বা সাধারণ ছাগলের মতো ঘাস, লতাপতা ও ভুসি খায়। এদের রোগবালাই একেবারেই কম। শীত ও গরমে এদের তেমন কোন সমস্যা হয় না। এটি প্রতিপালনের জন্য আমি নিয়মিত জেলা প্রাণী সম্পদের পরামর্শ নিয়ে থাকি। যদি কোন স্বাভাবিক সমস্যা হয় তবে তারা আমাদের নানা ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকে। বর্তমানে আমি ছাড়া আমার এ খামারে ৫ জন শ্রমিক কাজ করেছে। তারা সকাল বিকাল রাতে তাদের দেখাশোনা করে। খাবার দেওয়া, নিয়মিত পরিচর্যা করা ও ঔষধ সেবনের জন্য সার্বিক কাজ তারা করে থাকে।
কামাল বলেন, আগামী কোরবানির ঈদে একটি দুম্বা বিক্রি করব। খামারে যে দুম্বাটি সবচেয়ে বড় সেটিই আমি কোরবানির হাটে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ দুম্বাটি ১৫০ কেজি মাংস হবে। মাগুরা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর বলছে, মাগুরায় প্রথম বারের মতো কামাল দুম্বার খামার করেছে। জেলা প্রাণী সম্পদ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
এবার জেলার প্রাণী সম্পদ সেবা সপ্তাহ ও প্রাণী প্রদর্শনীতে সৌদি আরবের দুম্বা দেখতে অনেক মানুষের দূর-দূরান্তের ভিড় ছিল। দুম্বার মাংস খেতে স্বসাদু। এ মাংস খেলে রোগব্যাধী কম হয়। আমরা চাই কামালের মতো আরও কেউ দুম্বা খামার গড়তে আগ্রহী হোক। আমরা জেলার সব খামারিদের পশু পালন, পরিচর্যা ও পরামর্শ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছি। এ সেবা অব্যাহত থাকবে।
এএজেড
