স্বাধীনতার ৫১ বছরেও গড়ের ছনকায় নেই কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ‘গড়ের ছনকা’তে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫১ বছরেও গড়ে ওঠেনি সরকারি কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ওই এলাকার সহস্রাধিক শিশু একদিকে যেমন প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অপরদিকে সরকারি বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। বর্তমানে ওই এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের দূরত্ব বেশি হওয়ায় শিশুরা স্কুলে যেতে চায় না। ফলে শিশুরা যুক্ত হচ্ছে জেলে পেশায়। এতে করে নিরক্ষরতা ও শিশু শ্রম বাড়ছে বলে মনে করেন এলাকাবাসী। বর্তমানে ওই এলাকার শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। তারা গ্রামটিতে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনার দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয়রা জানান, ঘোনা ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ৬ নম্বর ওয়ার্ডে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫১ বছরেও কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠেনি।
তারা বলেন, ইউনিয়নের ছনকা গ্রাম দুই অংশে বিভক্ত। এর এক অংশ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতরে অপর অংশ ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভিতরে। ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমানে ৬০০ পরিবার বসবাস করে। এদের অধিকাংশ আদিবাসী চৌদালি, বাগদি সম্প্রদায়ের। যারা দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে।
এখানকার শিশুদের লেখাপড়ার জন্য একটি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখানে ক্লাস থ্রি এর বেশি পড়ানো হয় না। তাছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষায় যে অগ্রগতি হয়েছে সেই হারে কোনো অগ্রগতি হয়নি উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষেত্রে। অল্প জায়গায় বিভিন্ন বয়সী সহস্রাধিক শিশু লেখাপড়া করলেও সেখান থেকে তেমন কোনো কিছু শিখতে পারে না শিশুরা। তার উপর ওই উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্লাস থ্রি পাশ করার পর অন্য বিদ্যালয়ে যেতে চাই না তাদের সন্তানরা। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বিদ্যালয়ের দূরুত্ব বেশি হওয়াতে মূলত স্কুলে যেতে অনীহা তাদের সন্তানদের। যদি এই এলাকাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকত তাহলে প্রাথমিক শিক্ষার আলো থেকে তাদের সন্তানরা বঞ্চিত হতো না।
এ প্রসঙ্গে ওই এলাকার একাধিক শিশুর সঙ্গে কথা হলে তারা বলে, বিদ্যালয়ের দূরুত্ব অনেক হওয়াতে স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। এ কারণে আমরা এখন স্কুলে যায় না। স্কুলে না যেয়ে বাড়ির কাজে সাহায্য করি।
শিশুদের এমন কথার প্রেক্ষিতে তাদের অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা এই ওয়ার্ডের অধিকাংশ আদিবাসী চৌদালি, বাগদি সম্প্রদায়ের। আমরা সবাই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করি। এক দিন কাজ না করলে পেটে ভাত যায় না কারো।
অভিভাবকরা আরও বলেন, আমাদের এই ওয়ার্ড থেকে পার্শ্ববর্তী বিদ্যালয়ের দূরুত্ব অনেক। এতে করে আমাদের সন্তানরা বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় রোডে কম-বেশি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। যেটা নিয়ে অভিভাবক হিসেবে আমরা চিন্তাই থাকি। এ কারণে আমরা আমাদের সন্তানদের জোর করে বিদ্যালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করি না।
এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, হয়তো আমরা আদিবাসী সম্প্রদায়ের বলে সমাজ ও রাষ্ট্র আমাদের অবহেলার নজরে দেখে। তা না হলে স্বাধীনতা পরবর্তী ৫১ বছরেও সরকারি কোনো প্রাথমিক প্রতিষ্ঠান এই আদিবাসী গ্রামে গড়ে উঠলোনা কেন?
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু বক্কর সিদ্দীক বলেন, ঘোনা ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ডে প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও আমার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। এ কারণে এই এলাকার কোমলমতি শিশুরা যেন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ করব এখানে একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন স্থাপিত করা হয়।
এ প্রসঙ্গে ঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের বলেন, ঘোনা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড, শিক্ষার আলো অনেক পিছিয়ে। শিক্ষার যে প্রথম স্তর প্রাথমিক শিক্ষা সেটা থেকে বঞ্চিত ওই এলাকার শিশুরা। ফলে অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ঝড়ে পড়ছে। এতে করে তারা জেলে কাজে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে শিশু শ্রম বন্ধ এবং শিশুদেরকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ওখানে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় অতি জরুরি।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল গণি বলেন, সরকারের একটা প্রকল্প রয়েছে "দেড় হাজার বিদ্যালয়"। মূলত যে সমস্ত এলাকাতে সরকারি কোনো বিদ্যালয় নেই সেখানে বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য সরকার ওই প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে। যদি প্রকল্পটি চালু থাকে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের যে নীতিমালা সেটা যদি বজায় থাকে তাহলে ওই এলাকাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।