ঝিনাইদহে ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ
ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গরুর ‘লাম্পি স্কিন’ রোগ। ফলে খামারিরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। জেলায় ১০ হাজারের বেশি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে শতাধিক গরুর মৃত্যু হয়েছে। তবে সরকারি হিসাবে সংখ্যাটি ৫০। বাস্তবে সংখ্যাটি আরও বেশি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের লিখন হোসেন জানান, তার গোয়ালের মোট ৪টি গরুর পা ফুলে গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। তার একটি বড় গরুর অবস্থা খুবই খারাপ। গায়ের মাংশ পচে গর্ত হয়ে গেছে। ৫ হাজার টাকা খরচ করেও গরু সুস্থ হয়নি।
কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিয়ান গ্রামের কৃষক নারায়ণ বিশ্বাস জানান, তার হাল চাষের তিনটি বড় গরুর অবস্থা বেশ খারাপ। স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হলেও সুস্থ হচ্ছে না। কালীগঞ্জ উপজেলার পারখালকুলা গ্রামের মোমেনা বেগম জানান, তার একটি গাভী ৮ মাস আগে এই রোগে আক্রান্ত হলেও ভালো হওয়ার লক্ষণ নেই।
শৈলকুপা উপজেলার যাদপপুর গ্রামের সাহেব আলীর দুটি গুরু ভুগছে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে। গরুগুলো সুস্থ করতে এক মাস তার চোখে ঘুম নেই। একই গ্রামের হাসনা বানু এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তিনটি গরু কিনেছিলেন। ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে সংক্রমিত হয়েছে একটি গরু।
ঝিনাইদহের খামারি জাহানারা বেগম, ছবেদা বেগম, ওয়ারেশ আলী ও মখলেস শেখ জানান, এই রোগ খুবই ভয়াবহ। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মনোজিৎ কুমার মন্ডল বলেন, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোঁড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু প্রায় ১ বছর লাগে সুস্থ হতে। অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, জেলার ৬ উপজেলার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা আর হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এ রোগ বেশি ছড়িয়েছিল। তবে এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে না। আমরা ভ্যাকসিনেশন শুরু করেছি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম বলেন, মূলত মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগটি সারা দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগে এ ধরনের রোগ দেশে ছিল না। লাম্পি স্কিন ডিজিজের চিকিৎসায় গোট পক্সের ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে কাজে লাগতে পারে। দ্রুত রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত।
এসজি