ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়িচালকের ২ কোটির ডুপ্লেক্স বাড়ি!
আতিকুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে প্রাইভেটকার চালক আতিকুর রহমানের ২ কোটি টাকা মূল্যের ডুপ্লেক্স আলিশান বাড়ি নিয়ে জনমনে কৌতূহল দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঢাকায় রয়েছে তার একাধিক ব্যবসা। প্রাইভেটকার চালক হয়ে আতিকের কয়েক কোটি টাকার সম্পদ অর্জনে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
আতিকুর আর দশজনের মতো সাধারণ কোনো গাড়িচালক নন। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রী ইসরাতুন্নেসা কাদেরের গাড়িচালক ছিলেন তিনি। মন্ত্রী পরিবারের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে এসব সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে আতিকের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিংগাইর পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিমনগর মহল্লার মৃত লেহাজুদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান। ছোট বেলায় অর্থাভাবে ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে লেখাপড়ার ইতি টানেন। এরপর বেবিট্যাক্সি ড্রাইভিংয়ে মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার কর্মজীবন। বড় ভাই সরকারি দপ্তরে ড্রাইভিং পেশায় চাকরির সুবাদে এক সময়ে তার সহযোগিতায় আতিক কাজ পান ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর প্রাইভেটকারচালক হিসেবে। সেই সুবাদে অবৈধ পথে আয় করেন বহু টাকা। তার গ্রামের বাড়ি কাশিমনগর মহল্লায় গড়ে তোলা ডুপ্লেক্স বাড়িটির বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার ওপরে। এ ছাড়া ঢাকায় তার একাধিক ব্যবসা রয়েছে।
তারা আরও বলেন, আতিক ১৮ হাজার টাকা বেতনে সামান্য গাড়িচালকের চাকরি করে কিভাবে শহরে একাধিক ব্যবসা ও গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেন। বিষয়টি টক অব দ্য সিংগাইরে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আতিকুর রহমান সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগে গাড়ি চালকের চাকরি নিলেও তিনি সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালাতেন। এ সুযোগে তাদের ছত্রছায়ায় নানা অনিয়ম ও তদবির বাণিজ্য করে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন মোটা অংকের টাকা। সেই টাকা দিয়েই গ্রামে ডুপ্লেক্স বাড়ি ও ঢাকায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন বলে জানা গেছে।
এলাকার একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, করোনাকালে সিংগাইর থেকে ইটভর্তি ট্রাক ঢাকায় প্রবেশ করতে বিধিনিষেধ থাকলেও মন্ত্রী ও তার স্ত্রীর নাম ব্যবহার করে আতিক গাড়ি প্রতি ৫ হাজার টাকা করে নিতেন। ফলে ভাটা মালিকরাও তার শরণাপন্ন হতেন। এভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এ ছাড়াও আতিকের ঢাকায় রয়েছে জেন্টস পার্লার ও রেস্টুরেন্টের ব্যবসা।
এ বিষয়ে জানতে আতিকুর রহমানের খোঁজ না পাওয়ায় তার ছোট বোন রাবেয়া খাতুন গণমাধ্যমকে বলেন, আমার ভাই ঢাকায় থাকেন সরকারি চাকরি ও ইটের ব্যবসা করেন। সাত-আট বছর মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের স্ত্রীর গাড়ি চালিয়েছেন। বেঁচে থাকাবস্থায় মাকে দেখানোর জন্য ভাই বাড়িটি নির্মাণ করেছেন।
সিংগাইর উপজেলা দুর্নীতি দমন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস বলেন, এ বিষয়ে কেউ দুদকে অভিযোগ করলে কমিশন তদন্ত করে দেখবে। আমাদের কাজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা। তদন্ত করার এখতিয়ার আমাদের নেই।
জেলা দুর্নীতি দমন কমিশনের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আজিজ উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, যদি এরকম হয়ে থাকে তবে সেটা সরকারিভাবে তদন্ত হবে, মামলা হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে এবং অ্যাকশন নেবে।