টাঙ্গাইলে পানিবন্দি কয়েক হাজার মানুষ, নদীপাড়ের মানুষের মানবেতর জীবনযাপন
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীসহ জেলার সব নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে লোকালয়ের নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি প্রবেশ করছে। এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৩৮ সেন্টিমিটার সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার এবং ঝিনাই নদীর পানি কালিহাতীর জোকারচর পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৭৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শুক্রবার (০৫ জুলাই) সকালে টাঙ্গাইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। অপরদিকে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার ভূঞাপুর, গোপালপুর, টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে লোকায়গুলো পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী বাজারে খালে আংশিক কিছু পানিতে তলিয়ে গেছে এবং চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, অস্বাভাবিকহারে পানি বৃদ্ধির কারণে ফসলি জমি ও অসংখ্য ঘরবাড়িতে পানিতে তলি গেছে। এতে করে গবাদি পশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকের বাড়িতে দেখা দিয়ে বিশুদ্ধ পানির সংকট। অনেকে আবার পলিথিন কাগজের ছাউনি তুলে রাস্তার পাশে মানবেতর জীবনযাপন করছে এবং অনেকে তাদের স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন।
এছাড়া পানি বৃদ্ধির ফলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে চিতুলিয়াপাড়া, মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ী, জয়পুর, রেহাইগাবসারা, ভদ্রশিমুল, চর শুশুয়া, বাসুদেবকোল, রুলীপাড়া, রাজাপুরসহ আরও বিভিন্ন এলাকা। এরমধ্যে পাটিতাপাড়া ও মাটিকাটা এলাকায় ১০ থেকে ১৫ টি পরিবারের ঘরবাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে এবং ভাঙন অব্যাহত থাকায় আরও অনেকের বসতভিটা ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে।
নিকরাইলের মাটিকাটা, কোনাবাড়ী ও পাটিতাপাড়া এলাকার ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরফলে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতোমধ্যে অনেকের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে এবং থাকার জন্য অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, কিছু কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু তাতে কোনো কাজে আসছে না। বন্যার আগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো জিও ব্যাগ ফেলা বা স্থানী বাঁধ দিতো তাহলে এভাবে ভাঙতো না।
নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, নিকরাইলে অধিকাংশ এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে এবং সারপলশিয়া, মাটিকাটা, পাটিপাতাপাড়া, কোনাবাড়ী ও সিরাজকান্দি গ্রামে পানির স্রোতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এসব এলাকায় কিছু কিছু স্থানে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যায় এখন পর্যন্ত এই ইউনিয়নে প্রায় ১ হাজার ২০০ টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এসব মানুষের তালিকা করে ইউএনও বরাবর পাঠানো হবে।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার বলেন, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী, স্থলকাশি, চিতুলিয়াপাড়া, কয়েড়া, রুহুলীসহ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে এবং এসব এলাকায় সাড়ে ৪ শতাধিক পরিবারের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ইতোমধ্যে গোবিন্দাসী বাজার পানিতে তলিয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার জন্য জিও ব্যাগের চাহিদা, পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সহযোগিতার জন্য আজ সকালে ইউএনও মহোদয়ের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
অর্জনা ইউপি চেয়ারম্যান দিদারুল আলম খান মাহবুব বলেন, আমার ইউনিয়নটি পুরোটাই দুর্গম চরাঞ্চল। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং অনেকের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক ভাঙন অব্যাহত। এছাড়া পোকা-মাকড়ের আতঙ্ক বিরাজ করছে। ইউএনওর সাথে যোগাযোগ করে ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারের জন্য সহযোগিতার জন্য আবেদন করা হচ্ছে।
গাবসারা ইউপি চেয়ারম্যান শাহ আলম শাপলা আকন্দ বলেন, কালিপুর, মেঘারপটল, রেহাইগাবসারা, চন্ডিপুর, জয়পুর ও রুলীপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার কৃষকের তিল, পাটসহ অন্যান্য ফলস তলিয়ে গেছে। এ পর্যন্ত ১০-১৫ টি ঘরবাড়ি বিলীন এবং পানিবন্দি আড়াই'শ পরিবারের মানুষ। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে পুরো চর পানিবন্দি হয়ে যাবে। এলাকায় নিয়মিত খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলার চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকাগুলো পানি প্রবেশ করেছে এবং কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এনিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবগত করা হয়েছে। এসব মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে তালিকা করা হচ্ছে এবং দ্রত ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে।