প্রতারণার শিকার হয়ে পরীক্ষা দিতে পারল না ২২ শিক্ষার্থী, কেন্দ্রে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর
ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে অধ্যক্ষ আকতারুজ্জামান ও বর্তমান বাংলা প্রভাষক লোকমান হোসনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা ও দুর্নীতির কারণে চলমান এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারল না নিকরাইল শমশের ফকির ডিগ্রি কলেজের ২২ জন পরীক্ষার্থী। ফলে এবারের পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে রবিবার (৩০ জুন) সকালে পরীক্ষার প্রথম দিনে ওই কলেজের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা নিকরাইল পলশিয়া রানী দিনমনী উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে বিক্ষোভ-সমাবেশ, পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হলের বেঞ্চ ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে তাদের কেন্দ্রের ভেতর থেকে সরিয়ে দেওয়া হলেও বাহিরে এসে পরীক্ষা চলাচলকালীন সময়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
জানা গেছে, এইচএসসি পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত টাকা দাবি করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এতে অনেক শিক্ষার্থী অতিরিক্ত টাকা দিতে অস্বীকার করে। পরে কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক লোকমান হোসেন ২২ জন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নেয় ফরম পূরণের জন্য। কিন্তু পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও তা দেয়া হয়নি। ফলে বোর্ড থেকে কোনো প্রবেশপত্রও পায়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, রবিবার সকাল ৮ টা থেকে ২২ পরীক্ষার্থী কেন্দ্রে সমবেত হয়ে পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাওয়া শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করার চেষ্টা করলে তাদের বাঁধা দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করে হলের বেঞ্চ ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে তাদের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এই খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মানুনুর রশীদ, ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আহসান উল্লাহ্ এবং নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ ঘটনাস্থলে এসে পরীক্ষা শুরুর আধা ঘণ্টা পর বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেয়।
পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা নাজমুল ইসলামসহ বিক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা বলেন- ফরম ফিলাপের সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ ৫ থেকে ৮ হাজার টাকা দাবি করে। পরে শিক্ষক লোকমান হোসেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা করে নিয়ে ফরম পূরণের আশ্বাস দেয়। গত শনিবার প্রবেশপত্র আনতে গেলে জানতে পারি আমাদের প্রবেশপত্র হয়নি। পরে লোকমান স্যারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কলেজ থেকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়।
তারা আরও জানান- প্রতারণাকারী কলেজের সাবেক কেরানি ও বর্তমান বাংলা প্রভাষক লোকমান হোসেন, অধ্যক্ষসহ জড়িত অন্যান্য স্যারদের শাস্তি দাবি করে। অন্যথায় আন্দোলনসহ আত্মহত্যার পথ বেছে নেবে।
শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণার অভিযোগের বিষয়ে জানতে কলেজের সাবেক কেরানি ও বর্তমান বাংলা প্রভাষক লোকমান হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে কলেজটির অধ্যক্ষ আকতারুজ্জামান অস্বীকার করে ২২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিতে পারায় তাদের ব্যাপারে কোনো দায় নেবে না বলে জানিয়ে এই ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে উলটো বলেন, জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বছর কলেজ থেকে ১৭১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে।
নিকরাইল ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদুল হক মাসুদ বলেন, ২২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারার ঘটনায় অধ্যক্ষ ও লোকমানসহ যে-সকল শিক্ষকরা জড়িত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মামুনুর রশীদ বলেন, ২২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছে না বিষয়টি জেনেছিলাম। প্রথম পরীক্ষার দিন রোববার সকালে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী প্রবেশপত্র না পাওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। পরে তারা কেন্দ্রের গেট বন্ধ করে পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ করে। বিষয়টি জানা মাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে পরীক্ষার্থীদের সুষ্ঠু সমাধানের আশ^াসে তাদের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন- যারা শিক্ষার্থীদের থেকে ফরম ফিলাপের অর্থ নিয়ে পরীক্ষার দেওয়ার ব্যবস্থা করেনি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং বিষয়টি ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্টদের অবগত করা হয়েছে।