দুধ দিয়ে গোসল করানো হলো মুক্ত নাবিক সাব্বিরকে, পরিবারে বইছে খুশির জোয়ার
দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তুললেন নাবিক সাব্বিরকে। ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি থাকার ৬৫ দিন পর বাড়ি ফিরছেন নাবিক সাব্বির হোসেন। বাড়ি ফেরার খুশিতে মা-বাবা, ভাই-বোন, পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ আত্মীয়দের মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। এদিকে, সাব্বির বাড়ি ফেরার খবর জড়িয়ে পড়লে তাকে এক নজর দেখতে বন্ধু-বান্ধবসহ পুরো এলাকাবাসী ভিড় করছেন।
নাবিক সাব্বিরের বাড়ি টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ডাঙা ধলাপাড়া গ্রামে। হারুন অর রশীদ ও সালেহা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে।
গত বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সকালে টাঙ্গাইল পৌর শহরের আদালত পাড়া বড় বোন মিতু আক্তারের বাসায় পৌঁছান নাবিক সাব্বির হোসেন। এরপর বিকালে বোনের বাসা থেকে তিনি তার নিজ গ্রামে ফিরেন।
এরপর তাকে ফিরে পাওয়ার আনন্দে ও বিপদ-আপদ থেকে মুক্ত থাকার কামনায় দুধ দিয়ে গোসল করিয়ে ঘরে তোলেন দুই খালা ও বোন। তারপর ফুল দিয়ে বরণ করে নিয়ে সাব্বিরকে মিষ্টি মুখ করানো হয়।
সাব্বির জানান, ‘যখন আমাদের জলদস্যুরা তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন, তখন থেকে তাদের কাছে বন্দি জীবনযাপন করছিলাম। তবে জাহাজে আমরা যে যার কাজ ঠিকঠাক মত করেছি, রোজা রেখেছি, নামাজও পড়েছি।
তিনি জানান, ভয়ের বিষয় ছিল, জলদস্যুরা সময়-অসময়ে ফাঁকা গুলি ছুড়তো, সে সময় আমরা ভীষণ আতঙ্কিত হতাম। নেভির জাহাজ আমাদের জাহাজের আশপাশে আসলে তারা আমাদের সে সময় মুভ করতে দিত না।
তিনি আরও জানান, ছাড়া পেয়ে সেই ঈদের আনন্দটাই এখন আল্লাহ যেন দিয়েছেন। আমাদের ফিরিয়ে আনতে সিও স্যারসহ যারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ।
বোন মিতু আক্তার বলেন, ঈদের সময় সাব্বির আমাদের পাশে ছিল না। যে সময়টা কাটালো আমরা সব সময় চিন্তায় ছিলাম। ঈদ গেছে আমরা বলতে পারব না আনন্দ কি? কোন আনন্দ করতে পারেনি। আল্লাহ আমাদের কাছে আমার ভাইকে ফিরিয়ে দিয়েছে হাজার হাজার শুকরিয়া। সাব্বির আমাদের কাছে এসেছে এখন আমাদের ঈদ।
সাব্বিরের মা সালেহা বেগম বলেন, আজকে আমাদের অনেক খুশি। এই খুশিতে চোখে জ্বল ভাসছে। দেশবাসীরসহ সবার দোয়া ছিল। দশের দোয়ার সাথে আমাদের দোয়াও ছিল আজ সাব্বির আমাদের কাছে ফিরে আসছে আল্লাহ কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া।
গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হন এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজসহ ২৩ নাবিক। এরপর জাহাজটি পৌঁছায় দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনাপাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার ৬৫ দিন পর নাবিকরা বাংলাদেশের নিজ নিজ স্বজনদের কাছে ফিরেন। তারমধ্যে সাব্বিরও বাড়ি ফিরেছেন।
সাব্বির ২০১৪ সালে উপজেলার সহবতপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। পরে টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে পাস করে সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আব্দুল্লাহ নামক পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকুরি নেন।