বকেয়া বেতনের দাবিতে নারায়ণগঞ্জে সড়ক অবরোধ, পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ
নারায়ণগঞ্জে সড়ক অবরোধ, পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষ। ছবি: সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভরত শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চলের অবন্তী কালার টেক্স লিমিটেড নামে কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে এ সংঘর্ষ শুরু হয়।
জানা গেছে, এদিন দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ দুদিনের ছুটি ঘোষণা করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। ঈদের বেতন-বোনাস পেলেও গত মার্চের বেতন না দিয়েই আবার ছুটি দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শ্রমিকরা। এর মধ্যেই বেলা ১২টার দিকে মালিকপক্ষ কারখানার প্রধান গেটে সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দিন কারখানা বন্ধ ঘোষণার নোটিশ সাঁটিয়ে দেয়৷
এতে বলা হয়, গত ২০ ও ২১ এপ্রিল কারখানার শ্রমিকরা ‘বেআইনিভাবে ধর্মঘট ও বিশৃঙ্খলা’ সৃষ্টি করে কর্মবিরতি পালন করছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ২২ থেকে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হল৷
এরপরই বকেয়া বেতনের দাবিতে ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বিক্ষোভ করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে লাঠিচার্জ ও জলকামান দিয়ে পানি ছুড়ে পুলিশ। জবাবে পাল্টা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে শ্রমিকরা৷ এ সময় পুলিশকে কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ও শর্টগানের গুলি ছুড়তে দেখা যায়৷ বেলা ১টা পর্যন্ত এ সংঘর্ষ চলছিল৷
নারায়ণগঞ্জের বিক্ষোভরত শ্রমিকরা জানান, ঈদের আগে গত ৮ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত কাজ করার পর কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়৷ তখন শ্রমিকরা ঈদের বোনাস পেলেও মার্চ মাসের বেতন বকেয়া ছিল৷ সে সময় ঈদের আগেই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সেই বেতন পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছিলেন কারখানার মালিক। কিন্তু ঈদ পার হলেও বেতন পাননি শ্রমিকরা৷ তাদের অভিযোগ, বেতন বকেয়া থাকায় কষ্টে দিন কাটছে তাদের। অনেকে ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি৷ দিতে পারেননি বাসা ভাড়াও।
কারখানার শ্রমিক মো. আলম বলেন, গত ৮ মাস যাবৎ বেতন নিয়ে কারখানার মালিকপক্ষ গড়িমসি করছে। ঈদের দিনও মোবাইল হাতে নিয়া বইসা ছিলাম বেতন ঢুকবো এই আশায়৷ প্রতিমাসেই বেতনের লাইগা রাস্তায় নামতে হইতেছে৷ সামনে কোরবানির ঈদ, ওই ঈদেও আমাগো লগে এমন হইবো৷ সুমি নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, আমাগো আর ঈদ আনন্দ নাই৷ রোজার মইধ্যে ডাবল ডিউটি কইরাও বিল পাই নাই৷ এমনকি রোজার ডিউটির সময় ইফতারের খরচটাও দেয় নাই৷ নিজের কষ্টের টাকা পাইতে এখন রইদের মইধ্যে রাস্তায় নামছি৷ এর চেয়ে কষ্টের আর কী আছে!
অন্যদিকে একই দাবিতে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন ক্রোনী গ্রুপের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার কয়েকশ শ্রমিক৷ বেলা ১২টার দিকে ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তছলিম উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কয়েকশ শ্রমিক ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কে বৈদ্যুতিক খুঁটি, বাঁশ ও কাঠ ফেলে অবরোধ করছেন৷ এতে সড়কটিকে অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় যানজট দেখা দিয়েছে।
আর কারখানাটির মালিক প্রতিষ্ঠান ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানি বুধবার শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করবেন বলে জানান৷
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বলেন, সকাল থেকে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করে রেখেছে। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে বেতন-ভাতার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে শ্রমিকেরা। এতে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এতে অনেকে আহত হয়েছেন। তবে আহতের সংখ্যা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়।