প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে ৩৬ প্রাথমিক বিদ্যালয়
জামালপুরের বকশীগঞ্জে একটি পৌরসভাসহ সাতটি ইউনিয়নে ৩৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ছাড়াই চলছে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এছাড়াও আরও ৩৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের সংকটের কারণে বিদ্যালয় গুলোতে পাঠদান ও প্রশাসনিক কাজে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় চরম হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। নানা সংকটের কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে দৈন্যদশা চলছে। একারণে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে। প্রধান শিক্ষক না থাকার কারণে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উপজেলায় জাতীয়করণ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ মোট ১১০ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে ৩৬ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। পদোন্নতি না হওয়ায় এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ পূরণ করা যাচ্ছেনা। কোন কোন বিদ্যালয়ে প্রায় দেড় যুগ সময় পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা সম্ভব হয়নি।
আবার কোন কোন বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে পাঠদানে ব্যাপক বিঘ্ন ঘটছে। সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ায় অন্য সহকারী শিক্ষকরা তাকে মানতে চান না। ফলে এসব স্কুলের পাঠদানসহ শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে সেসব বিদ্যালয় গুলো হলো, সাজিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিলাখীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুশলনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝালরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠান্ডারবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বগারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাসের গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গেদরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মদনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদারের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলকিহারা পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলকিহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইরমারী আক্কাছ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইরমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাসির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিনিয়া ওমর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বংশী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আইরমারী নতুন পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মেরুরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেকেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সেকেরচর কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাতভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈষ্ণব পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুবের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দূর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামালের বার্ত্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আবদুল গণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিনারচর উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বালুগাঁও কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, টিলাপাড়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় , কলকিহারা ভাটি পাড়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর পলাশতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
উপজেলার বগারচর ইউনিয়নের সুবাসপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১০ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম। বারবার কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও প্রধান শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না এই বিদ্যালয়ে। আলীরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে পাঠদান চলছে। এই বিদ্যালয়ে ৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শুন্য রয়েছে। এরমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অফিসের কাজে বাইরে গেলে বাড়তি চাপে পড়তে হয় অন্য সহকারী শিক্ষকদের।
মদনেরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, তার বিদ্যালয়ে ১৬ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় অফিসিয়াল কাজে নানা ভাবে বিঘ্ন ঘটছে। অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয় দুর্গম চরাঞ্চল ও নদী এলাকায় হওয়ায় বিদ্যালয় গুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক থাকতে চান না বলে অভিযোগ রয়েছে। অবিলম্বে শূন্যপদ গুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য থাকার বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে পদোন্নতি কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। পদোন্নতি কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান শিক্ষকের শুন্য পদ গুলো পূরণ করা সম্ভব হবে। আশা করি শিগগিরই এর সমস্যার সমাধান হবে।
এএজেড