শিক্ষায় বৈষম্য, ৩৯৯ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক!
টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার ৩৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদগুলোর মধ্যে ৬৫ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার প্রধান শিক্ষকরা অবসরে যাওয়ার পর বেশিরভাগ স্কুলের পদগুলো শূন্যই থেকে যায়। ফলে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরের শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক নিয়মিত পাওয়ায় মফস্বল এলাকাগুলো প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মধুপুরে ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। একইভাবে ধনবাড়ীতে ৮৫টির মধ্যে ২৭টি, ঘাটাইলে ১৭২টির মধ্যে ৯০টিতে, সখীপুরে ১৪৭টির মধ্যে ১৫টিতে, গোপালপুরে ১৬১টির মধ্যে ৪৯টিতে, বাসাইলে ৭৯টির মধ্যে ১৩টিতে, সদর উপজেলায় ১৬৩টির মধ্যে ৩১টিতে, দেলদুয়ারে ১০০টির মধ্যে ২৮টিতে।
এছাড়াও মির্জাপুরে ১৭০টির মধ্যে ২৩টিতে, কালিহাতীতে ১৭০টির মধ্যে ২৯টিতে, নাগরপুরে ১৫৬টির মধ্যে ৪৬টিতে এবং ভূঞাপুরে ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ২৮টিতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। কোন কোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ বছরের অধিক সময় ধরে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়ের সূত্রমতে, প্রধান শিক্ষকের পদগুলোর ৬৫ ভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সরাসরি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হচ্ছে না। আবার সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়াও বন্ধ রয়েছে। তাই প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।
জেলার ভূঞাপুর উপজেলার যমুনার চরাঞ্চলে পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। একজন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ কারণে তাকে প্রশাসনিক কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের শিক্ষাদানের পুরো বিষয় বাকি দুজন সহকারী শিক্ষককে সামলাতে হয়। এতে বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থা শুধু পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয় প্রধান শিক্ষক বিহীন প্রায় সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূর্ব রামাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে চলতি দায়িত্বে রয়েছেন স্কুলের সহকারী শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান মিয়া। অপর সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম জানান, আসাদুজ্জামান মিয়াকে প্রশাসনিক দায়িত্বপালন করতে হয় আবার ক্লাসও নিতে হয়। প্রশাসনিক কাজে বা বিভিন্ন সভায় যোগদান করতে তাকে প্রতি মাসেই উপজেলা সদরে যেতে হয়। তখন তিনি ক্লাস নিতে পারেন না। এর ফলে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হয়।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার বাসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছফেদা খানম এক মাস আগে অবসরে গেছেন। তারপর সেখানে চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী শিক্ষক আছমা পারভীনকে। এভাবেই কোনো স্কুলের প্রধান শিক্ষক অবসরে যাওয়ার পর শূন্য হয়ে পড়ছে পদগুলো। সেখানে সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।
এছাড়াও একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহর এলাকায় বা শহরতলীর স্কুলগুলোতে অবসরের কারণে পদ শূন্য হলে অন্য এলাকা থেকে বদলি হয়ে পদ পূরণ করা হয়। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকার স্কুলগুলোতে অবসরে যাওয়ার পর পদ শূন্যই থেকে যাচ্ছে। তাই প্রধান শিক্ষকের পদশূন্য স্কুলের সংখ্যা প্রতিবছরই বাড়ছে। ফলে শহর ও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করছে। পদোন্নতি হলে শূন্য পদগুলো পূরণ করা যাবে।
টাঙ্গাইলের সরকারি এমএম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ শামসুল হুদা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিশুদের শিক্ষার ভিত তৈরি হয়। তাই সেখানে পাঠদান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য পদোন্নতি ও নিয়োগ সংক্রান্ত সব জটিলতার অবসান ঘটিয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য সরকারের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। শহর ও গ্রামগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থাও সমান্তরাল হওয়া প্রয়োজন। না হলে সমাজে শিক্ষা বৈষম্য ঘটতে বাধ্য।
এএজেড