বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব ৮০ বছরের জসীম

জসীম উদ্দিন শেখ। বয়স ৮০। ফেরিঘাটে এক অস্থায়ী দোকানে পিঠা বিক্রি করেন তিনি। ৪৫ বছর ধরে এই এলাকায় পিঠা বিক্রি করছেন। সহায় সম্বলহীন এই বৃদ্ধের সংসারে আছেন কেবলই স্ত্রী। দুই ছেলে ও দুই মেয়ে থাকলেও তারা আলাদা থাকেন। তাই বৃদ্ধা স্ত্রীকে নিয়ে জীবন যুদ্ধে এই বয়সেও সংগ্রাম করে চলেছেন অসহায় এই বৃদ্ধ।
জসীম উদ্দিন শেখ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা। যমুনার ভয়াবহ ভাঙনের শিকারে পৈত্রিক বসতভিটা হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েন তিনি। সারাদিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পেট কোনও রকমে চললেও রাতের ঘুম ভেঙে যায় তার। কারণ তার থাকার নিজের কোনও ঘর নাই।
বঙ্গবন্ধু সেতুর (বিবিএ) জায়গায় একটা টিনের ঘর করে থাকেন তিনি। কিন্তু সেই বাড়িটিও সরিয়ে নিতে একাধিকবার জানিয়েছে বিবিএ। এমনিতেই সংসারের ঘানি টানতে টানতে ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারেন না। এরপরও পিঠা বিক্রি করে অভাব-অনটনের সংসারের বোঝা এখনও বইছেন তিনি। কিন্তু এই বৃদ্ধ বয়সে বঙ্গবন্ধু সেতুর (বিবিএ) জায়গা থেকে স্ত্রীকে নিয়ে কোথায় যাবেন? কোথায় থাকবেন- সেই চিন্তায় অস্থির থাকেন জসীম উদ্দিন শেখ।
অসহায় জসীম জানান, পিঠা বিক্রি করে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দুই ছেলেকেও বড় করেছেন। দুই ছেলের মধ্যে একজন কাঠ মিস্ত্রী, আরেকজন চা বিক্রি করে কোনও রকম তাদের সংসার চালাচ্ছে। তারাও পৃথক।
এ ছাড়া করোনার আগে তারা তাকে একটু আর্থিক সহায়তা করত কিন্তু করোনাতে তারাও পুঁজি হারিয়েছেন। তাই নিজেদের সংসার চালাতে তারা হিমশিম খায়। এ জন্য ছেলেদের উপর বাড়তি বোঝা হতে চান না তিনি।
অসহায় এই বৃদ্ধ বলেন, ‘বুড়ো বয়সে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড পেয়েছি। তিন মাস পরপর ১৫০০ টাকা করে পেলেও তা দিয়ে ওষুধ কেনার টাকাও হয় না। বর্তমানে আমার বয়সও ৮০ হয়েছে। এরপরও পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছি। বর্তমানে সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভ হয় না তেমন। কিন্তু কি করব, পেট তো থেমে থাকে না। পেটের দায়ে আমাকে এই বয়সেও পিঠা বিক্রি করতে হচ্ছে।’
নিজের জায়গাতে বসতঘর নাই জানিয়ে জসীম উদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমি একজন নিঃস্ব মানুষ। আমার নিজের কোনও জায়গা-জমি নেই। বঙ্গবন্ধু সেতুর জমিতে ঘর করে আছি। সেখান থেকেও চলে যেতে বলে। এই বয়সে আমি কোথায় যাব? সরকার যদি আমাকে একটা ঘর দিত তাহলে এই বয়সে একটু নিশ্চিন্তে থাকতে পারতাম। বৃদ্ধ বয়সে একটু নিজের ঘরে থাকতে চাই।’
গাবসারা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তার হোসেন বলেন, ‘ছোট থেকে তাকে গোবিন্দাসী ফেরিঘাটে পিঠা বিক্রি করে আসছেন দেখে আসছি। দুর্গম চরাঞ্চলে যমুনার করালগ্রাসে সর্বস্ব হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে ফেরিঘাট পাড়ে বসবাস করছেন। অসহায় এই মানুষটিকে সরকারিভাবে একটি ঘর করে দিতে পারলে তিনি খুব উপকৃত হবেন।’
এ বিষয়ে গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান দুলাল হোসেন চকদার জানান, সরকারিভাবে তিনি যেন আশ্রয় প্রকল্পের ঘর পায় সে বিষয়ে এমপি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলে তার জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শহিদুজ্জামান মাহমুদ জানান, তাকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। যেহেতু তিনি খুব বৃদ্ধ আর অসহায় তাই বয়স বিবেচনা করে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা তাকে পাইয়ে দিতে চেষ্টা করা হবে।
এসআইএইচ
