যমুনায় বালু উত্তোলন এখন গলার কাঁটা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙনের শিকার উপজেলার চার ইউনিয়নের মানুষ। শীত-বর্ষাসহ সব ঋতুতেই অবাধে বালু উত্তোলন করছে বালু খেকোরা। স্থানীয় প্রশাসন এসব বন্ধে মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে বালু উত্তোলনের কাজে জড়িত শ্রমিকদের জেল-জরিমানা করে। কিন্তু বালু খেকোরা থাকেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। এমন অভিযানকে লোক দেখানো বলে মনে করছেন নদী ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ।
চলতি মৌসুমে নদীতে যতবারই পানি বেড়েছে ততবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটান নদীপাড়ের মানুষ। গাবসারা, অর্জুনা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নে এ বছর শতশত ঘরবাড়ি ও নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর কারণে নদীর গতিপথ পরির্বতন হচ্ছে। ভাঙন ও গতিপথ পরিবর্তনের একটাই কারণ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
সম্প্রতি হঠাৎ করে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেড়ে যায় ভাঙনের তীব্রতা। ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি ও স্কুলসহ আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। অনেকে রাস্তার পাশে বা স্বজনদের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। নদীর কিনারে বালুর স্তুপ করে রেখেছে বালু খেকোরা। দূর থেকে মনে হবে বিশাল পাহাড়।
উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, জিগাতলা, খানুরবাড়ী, চিতুলিয়াপাড়া, কোনাবাড়ি, পাতিতাপাড়া, গাবসারা, অর্জুনা, বাসুদেবকোল, ভদ্রশিমুল, তারাই, কুঠিবয়ড়া ও রায়ের বাসালিয়াসহ প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকা এ বছর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এতে করে আতঙ্কে রাত পার করে নদী পাড়ের মানুষ।
নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হলেও তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পান না। তা ছাড়া প্রতি বছরই বালু খেকোরা যমুনার জেগে ওঠা চর কেটে বিক্রি করা শুরু করেছে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে বালু খেকোরা জমির মালিকদের জিম্মি করে ইজারার নামে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছে।
চিতুলিয়াপাড়ার ভাঙনের শিকার ফজল বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি ও জনপ্রনিধিরা উপরমহল ম্যানেজ করে অবাধে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে চরাঞ্চলের ফসলি জমি কেটে বালুর পাহাড় করেছে। বালুখেকোরা এখন কৌশলও পরিবর্তন করেছে। তারা এখন রাতের আঁধারে বালু উত্তোলন করে। ফলে আমাদের বসতভিটা বিলীন হচ্ছে। বালু উত্তোলন এখন যেন আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, অবৈধ বালুঘাট বা মহালে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোছা. নার্গিস বেগম বলেন, যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার অসংখ্য লোকজন প্রায়ই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের বিষয়ে নানা ধরনের অভিযোগ নিয়ে আসে। তাদের লিখিত অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভূঞাপুর উপজেলার চিতুলিয়াপাড়া ও কষ্টাপাড়া এলাকায় ভাঙন রোধে জিওব্যাগ ফেলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে এলে অচিরেই ভাঙনকবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলা হবে।
এসএন
