নদীর ভাঙ্গনে ভেঙে পড়ল সেতু, ভোগান্তিতে ১০ গ্রামের মানুষ
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাঙনে অবশেষে বিলীন হয়ে গেল সেতু ও ৫০০ মিটার পাকা রাস্তা। উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের বৈলট-জাবরা সড়কের কোশুন্ডা এলাকায় নির্মিত ওই সেতুটি সোমবার (৩১ অক্টোবর) বিকালে পুরোপুরি ভেঙে পড়ায় কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, অব্যাহত নদী ভাঙনে সেতুটি দেবে যাওয়া শুরু হয় শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) রাত থেকে। দেবে যাওয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে সেতু দিয়ে চলাচল করছিল মানুষ। কিন্তু সোমবার বিকালে সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। এতে সব ধরনের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এই সেতুর দুই পাশের কমপক্ষে ৫০০ মিটার পাকা রাস্তা, ৫ একর (৫ শ শতাংশ) ফসলি জমি ও ১৫টি বসত বাড়ি। ভাঙনের কবলে রয়েছে আরো অর্ধশত বসত বাড়ি।
এদিকে অন্যত্রে আশ্রয় নিয়েছে ভাঙনকবলিত ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে এলজিইডির অর্থায়নে উপজেলার কোশুন্ডা এলাকায় এই সেতু নির্মিত হয়। আর সেতুর দুই পাশে বৈলট এলাকা থেকে জাবরা পর্যন্ত পাকা রাস্তাটি হয় ২০১০ সালে। ধলেশ্বরী নদীর পাশের রাস্তা দিয়ে নির্মিত সেতু ও পাকা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতেন বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের কোশুন্ডা, চড় কোশুন্ডা, পেঁচার কান্দা, শিমুলিয়া, সাইংজুরী, গোবর চাকা, বেনুরা, চড় বেনুরা, সিংজুরী ইউনিয়নের আশাপুর, শিমুলিয়া, ঘিওর ইউনিয়নের ঘিওর পূর্ব পাড়া গ্রামের বাসিন্দরা। এখন সেতু ও সংলগ্ন পাকা সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এসব এলাকার মানুষদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে কমপক্ষে ৪/৫ কিলোমিটার ঘুরে তাদের বাড়ি যেতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ধলেশ্বরী নদীতে এসব এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও জমি ভেঙে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নদীতে অসময়ে পানি বৃদ্ধির ফলে চলতি মাসের শুরুর দিকে ভাঙন তীব্রতর হয়। মাঝে পানি কমে গেলে ভাঙন থামেনি। সেতু ও পাকা রাস্তা নদীর পেটে। এখন আমরা যাতায়াত করব কিভাবে?
ভাঙনে ফসলি জমি ও ভিটে হারানো আনোয়ারুল হক বলেন, চলতি মাসের ভাঙনে আমার ফসলি জমি ও বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা না নেওয়া হলে আরো অনেক মানুষ ভিটে হারা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাদেক মোল্লা নামের স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আসলে আমাদের কপালটাই খারাপ। প্রতি বছরই নদী ভাঙে। ভিটেমাটি হারা হয় মানুষ। ফসলি জমি ভেঙে অবস্থা সম্পন্ন মানুষ মুহূর্তেই বসে যায় পথে। সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেননি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রতন মিয়া বলেন, অব্যাহত নদী ভাঙনে গত ৩ বছর ধরে এই ইউনিয়নের কমপক্ষে ৭০ থেকে ৮০টি বসতবাড়ি ও বির্স্তীর্ণ ফসলি জমি নদীতে ভেঙে গেছে। চলতি বছর ভাঙন ধরে রাস্তা ও সেতুর গোড়ায়। এ ব্যাপারে আমি ও আমার ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বারবার অবহিত করলেও তারা কার্যত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, জনস্বার্থে দ্রুত বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কী না সেটা ভাবছি।
এ ব্যাপারে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) হামিদুর রহমান বলেন বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা আমি কয়েকবার পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত ও মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। নদীর গতিপথ সরলীকরণ করলে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি রক্ষা করা যাবে। এলাকাবাসীর বিকল্প যোগাযোগ ব্যবস্থা করতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেব।
এসআইএইচ