এবার যমুনায় মিলছে ২৫ কেজির বাঘাইড়
টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে দফায় দফায় পানি বৃদ্ধিতে দীর্ঘ কয়েক মাস তেমন কোনো মাছ জালে ধরা পড়েনি। যার কারণে অভাব-অনটনে পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছিল অসহায় শত শত জেলে পরিবার। মাসখানেক আগে জেলেরা নদীতে মাছ শিকারে নামলেও তার কয়েকদিন পরেই শুরু হয় মা ইলিশের প্রজনন মৌসুম। এতে মা ইলিশ শিকার রোধে সরকারি নির্দেশনা মতে ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর রাত ১২ টা পর্যন্ত নদীতে মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা ছিল। ফলে আরও মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে জেলেদের। তবে সরকারি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে টানা ৩ সপ্তাহ পর ফের কর্ম ব্যস্ততায় ফিরেছে যমুনা নদীতে মাছ শিকারী জেলেরা। গত ২৮ অক্টোবর রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই নৌকা নিয়ে মাছ শিকারে নেমে পড়েন জেলেরা। শিকারে গিয়ে তারা খালি হাতে ফিরছেন না, কম-বেশি বাঘাইড় ও অন্যান্য মাছ শিকার করে ফিরে জেলেরা। জেলেদের জালে ৬ থেকে ২৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় বেশি ধরা পড়ে। আর এ বাঘাইড় মাছের চাহিদা স্থানীয় হাট-বাজারে ব্যাপক। ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হয়। ক্রেতারা একা কিনতে না পারলেও কয়েকজনে মিলে কিনে তা ভাগ করে নেন।
গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে নদীতে বেশি বাঘাইড় ধরা পড়ছে বলে জানিয়েছে কালিহাতী উপজেলার গোহালিয়াবাড়ী ইউনিয়নের পাথরঘাট এলাকার জেলে নিজাম উদ্দিন মন্ডল ও আরশেদ আলী। তারা জানান, ‘প্রত্যেক বছরে এ সময়ে যমুনার পানি অনেকখানি কমে আসে। আর যমুনা পাড়ের জেলে সম্প্রদায়ের লোকজন এ সময়ের অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকেন। নদীতে যত পানি কমবে তত বেশি বাঘাইড় ধরা পড়ে জালে। বর্তমানে বাঘাইড় ধরার ভরা মৌসুম। তাই আমরা জেলেরা দিনের শেষবেলা নদীতে নেমে পড়ি।
অপর জেলে রকিবুল খান বলেন, শুধু আমরা নই নদীতে পানি কমে আসায় যমুনা চরাঞ্চল বেষ্টিত কালিহাতী, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল সদর, গোপালপুর ও নাগরপুর উপজেলার শত শত জেলে মাছ শিকারে অসংখ্য ছোট-বড় নৌকা নিয়ে নদীতে শিকারে চলে যাই। বাঘাইড় বা অন্যান্য মাছ ধরে কিনারে আসি। সবদিন সবার জালে বাঘাইড় ধরা পড়ে না। ভাগ্যগুণে আবার অনেকের জালে দুই-চারটিও ধরা পড়ে। আবার কয়েক দিনে একটাও মিলে না, শূন্য হাতে বাড়ি ফিরি।
একই এলাকার জেলে রাশেদুল ইসলাম ও খোরশেদ মন্ডল জানান, নদীতে পানি কমতে শুরু করায় প্রচুর পরিমাণে বাঘাইড় মাছ ধরা পড়ছে। অন্যান্য মাছ ধরা পড়ে কিন্তু সীমিত। বাঘাইড় মাছ ধরতে কারেন্ট (ফাঁস) জাল ব্যবহার করি।
মাছ ধরতে নদীতে কোনো ধরনের সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে তারা জানান, ৭-২৮ অক্টোবর পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তার আগে মাছ শিকারে নেমে ছিলাম। তখন নদীপথে ডাকাতের কবলে পড়ি। তারা ৩৫ কেজি ওজনের ২টি বাঘাইড়সহ আমাদের জাল লুট করে নেয়। এখন নদীতে ডাকাতের আতঙ্ক।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমদাদুল হক জানান, গত ২৮ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা উঠায় জেলেরা ফের কর্ম ব্যস্ততায় ফিরছে। নদীতে পানি কমতে থাকায় জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বাঘাইড়। বর্তমানে বাঘাইড় মাছের ভরা মৌসুম।
নদীতে ডাকাত আতঙ্কের বিষয়ে তিনি জানান, জেলার ভূঞাপুরের গোবিন্দাসী ও বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি রয়েছে। এ ছাড়াও সিরাজগঞ্জের চৌহালীর নৌ-পুলিশের সদস্যরা টহল দিচ্ছে। জেলেরা যেন নির্বিঘ্নে মাছ শিকার করতে পারে সে লক্ষ্যে মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হবে।
এসআইএইচ