চেয়ারম্যানের ছেলের ছত্রছায়ায় মাদকের অভয়ারণ্য সুয়াপুর!

ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিনের জ্যেষ্ঠ ছেলে মো. হালিমের ছত্রছায়ায় চিহ্নিত মাদক কারবারিরা মাদকের অভয়ারণ্য বানিয়েছে সুয়াপুর এলাকাকে। এতে সুয়াপুরে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হয়ে গেছে। চেয়ারম্যানের ছেলের ছত্রছায়ায় থাকার কারণে কেউ এসব চিহ্নিত মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সুয়াপুর এলাকা এখন মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হাত বাড়ালেই গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন পাওয়া যায়। চেয়ারম্যানের বড় ছেলে হালিম এসব চিহ্নিত মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে সুয়াপুর এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। হালিমের ছত্রছায়ায় থেকে এরা প্রকাশ্যেই মাদক ব্যবসা করে। কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বললে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিও করে এরা। তাই সবাই এসব মাদক কারবারিদের সম্পর্কে জানলেও কেউ কিছু বলতে সাহস পায় না।
সুয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা আবুল হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, চেয়ারম্যানের ছেলের সঙ্গে যেসব লোকজন থাকে সবাই মাদক কারবারি। এটা শুধু আমি না, এলাকার সবাই জানে। কিন্তু নির্যাতনের ভয়ে কেউ কিছু বলে না। পুলিশ সুপার স্যার বলেছেন, মাদক নির্মূল করবেন। আমরা সুয়াপুরবাসী তার কথার প্রতিফলন দেখতে চাই। সুয়াপুর এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে এসপি স্যারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে সুয়াপুরের সাধারণ জনগণ।
মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় নির্যাতনের শিকার হওয়া সুয়াপুরের মাহিবুর রহমান মুন্না বলেন, ৫-৬ মাস আগে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলায় চেয়ারম্যানের বড় ছেলে হালিমের নির্দেশে রিফিউজি রাসেল, আওলাদ, ইবরাহীম, হিমেল আমার উপর হামলা চালায়। মাদক কারবারিদের হাতে নির্যাতিত হয়ে দীর্ঘদিন এনাম মেডিকেলে ভর্তি ছিলাম। যেসব মাদক কারবারি আমাকে মারধর করেছিল তারা সবাই চেয়ারম্যানের বড় ছেলে হালিমের লোক। সেই ঘটনায় এখনো মামলা চলমান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, একজন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব হচ্ছে তার ইউনিয়ন থেকে মাদকসহ যেকোনো অপরাধ দমন করতে সচেষ্ট হওয়া। কিন্তু তার ছেলেই যদি মাদক কারবারিদের আশকারা দেয়। মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে চলাফেরা করে। তাহলে মাদকের আগ্রাসন বৃদ্ধি পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি চেয়ারম্যানের ছেলে হালিমের হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল রাজা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, হালিম আমাকে তার সঙ্গে রাজনীতি করতে বলেছিল। কিন্তু আমি তাকে বলেছি, আপনার সঙ্গে যারা চলাফেরা করে সবাই চিহ্নিত মাদক কারবারি। মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে যারা চলাফেরা করে এমন কারও সঙ্গে রাজনীতি করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেই কথার জের ধরে গত ৬ অক্টোবর রাতে ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে আটকে আমাকে অমানুষিক নির্যাতন করে। নির্যাতনের একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলে আমাকে ফেলে রেখে চলে যায় তারা। পরে স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। থানায় অভিযোগ করলে পরবর্তীতে ওসি স্যার থানায় ডেকে আমাদের দুইপক্ষকে মিলিয়ে দেয়।
অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যানের ছেলে মো. হালিম বলেন, আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য কতিপয় খারাপ লোক এই অভিযোগ করেছে। ওইসব মাদক কারবারিদের কারও সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক নাই, কিন্তু আপনার এবং আপনাদের পরিবারের প্রায় অনুষ্ঠানেই তারা উপস্থিত থাকে। সেই ছবিও আমার কাছে আছে। তবে প্রশ্নের জবাবে তিনি সদুত্তর দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কফিল উদ্দিন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করছি। মাদকবিরোধী সমাবেশ করেছি কয়েকদিন আগে।
মাদক কারবারিরা ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরেই প্রায় সময় থাকে এবং আপনার বড় ছেলে তাদেরকে আশকারা দেয় এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিষদে যারা প্রায়ই আসে তাদের মধ্যে মাদক কারবারি নেই, সেটা আমি চ্যালেঞ্জ করব না। অনেক মানুষের ভেতরে গোপনে দুই একজন মাদক কারবারি থাকতে পারে। তবে ছেলের বিষয়টা কৌশলে এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের সারাসি অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে আমরা অনেক মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছি।
সুয়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ছেলে হালিমের আশকারায় চিহ্নিত মাদক কারবারিরা সুয়াপুর এলাকাকে মাদকের অভয়ারণ্য বানিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তো কাউকে আশকারা দিচ্ছি না। আমরা যার কাছে মাদক পাব তাকেই গ্রেপ্তার করে চালান দিয়ে দেব। এ বিষয়ে কেউ ছাড় পাবে না। সুয়াপুরসহ ধামরাইয়ের প্রতিটি ইউনিয়ন মাদকমুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এসজি
