পদ বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ যুব মহিলা লীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে
ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের কমিটিতে পদ বাণিজ্যসহ একাধিক অভিযোগ উঠেছে সংগঠনটির সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদানের ঘর ও নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে আর্থিক প্রতারণা, কমিটিতে ভুয়া নাম, একাধিক নামে নিজের নাম্বারসহ এক নাম্বার বারবার ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঢাকাপ্রকাশ-এর অনুসন্ধানে জানা যায়, মিম খান ও শাহানাজ পারভীন শোভা নামের দুই নেত্রীকে ২নং ও ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন তাসলিমা শেখ লিমা। টাকা নিয়েও ওই দুই নেত্রীকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেননি তিনি। তা ছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত সরকারি অনুদানের ঘর ও নলকূপ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রতারণার মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে তাসলিমা শেখ লিমা।
ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলা লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির ৮০ শতাংশ সদস্য ভুয়া বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মিম খান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বরাবর সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে সমাধানের জন্য একটি আবেদনপত্র পাঠালেও তা গ্রহণ করেনি কেন্দ্রীয় কমিটি।
এদিকে ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের খসড়া কমিটির একটি কপি আসে ঢাকাপ্রকাশ-এর হাতে। তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, কমিটির বিভিন্ন স্থানে নামের পাশে কোনো ফোন নাম্বার ব্যবহার করা হয়নি এবং এসব নামের কোনো যুব মহিলা লীগ নেত্রী আছে বলে কেউ চিনেন না। এসব ভুয়া নাম ব্যবহার করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া একাধিকস্থানে নিজের নাম্বারসহ এক নাম্বার বারবার ব্যবহার করা হয়েছে। একই কমিটিতে রয়েছে মা-মেয়ের নামও।
এ বিষয়ে মিম খান বলেন, আমাকে ২নং সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ দেওয়ার কথা বলে প্রথমে ৬০ হাজার, তারপর ২০ হাজার, আবার ১০ হাজার করে মোট ৯০ হাজার টাকা নিয়েছে লিমা। তা ছাড়া কমিটির ৮০ শতাংশ সদস্যই ভুয়া। এ বিষয়ে আমি একটি লিখিত অভিযোগ দিলে কেন্দ্রীয় কমিটি তা গ্রহণ করেনি। তবে মৌখিকভাবে বলেছেন বিষয়টি দেখবেন।
পদ না পেয়ে যুব মহিলা লীগ থেকে অব্যাহতি নেওয়া শাহনাজ পারভীন শোভা বলেন, আমাকে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন সময় ৬০ হাজার টাকা খরচ করিয়েছে। আমি সংগঠনের জন্য অনেক ত্যাগ শিকার করেছি, টাকা খরচ করেছি। তারপরও আমাকে পদ দেয়নি। পরে আমি যুব মহিলা লীগ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু পক্ষাঘাত ও পেশাজীবী পরিষদ (বিপিপিপি) নামের একটি সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারি অনুদান দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ৪ কোটি ৭২ লাখ ১০ হাজার টাকা আত্মসাতকারী চক্রের অন্যতম সদস্য যুব মহিলা লীগের ঢাকা জেলা উত্তর এর সভাপতি শেখ লিমা। পরে ওই প্রতিষ্ঠানের সাভার শাখার বর্তমান সভাপতি শামীমা বাসার বাদী হয়ে গত বছর ডিসেম্বরে ৮ জনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাসলিমা শেখ লিমাসহ ৭ নেত্রীর জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রকাশ্য ও গোপন তদন্ত করে এবং কাগজপত্র পর্যালোচনা করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
এ ব্যাপারে মামলার বাদী শামীমা বাসার বলেন, আমার দায়ের করা মামলায় বর্তমানে তারা জামিনে আছেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা জেলা উত্তর যুব মহিলালীগ সভাপতি তাসলিমা শেখ লিমা মুঠোফোনে বলেন, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী ও পক্ষাগাত পরিষদের নামে আমি কোনো আর্থিক দুর্নীতি করিনি।
মিম খান নামের এক নেত্রীর কাছ থেকে পদ দেওয়ার কথা বলে ৯০ হাজার টাকা নিয়েও পদ দেননি। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরে আমি জুতা মারব, ও একটা ফালতু। এই কথা বলে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন। তারপর বারবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নাজমা আক্তার বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
এসজি