বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Dhaka Prokash
Header Ad

সুনামগঞ্জে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি ফসলরক্ষা বাঁধ

হাওর-অধ্যুষিত সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবল বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেখা দেয় অকাল বন্যা। মার্চের দিকে শুরু হওয়া এই বন্যায় হাওরের বোরো ধান ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ফলে ধান রক্ষায় প্রতি বছর সুনামগঞ্জ জেলায় হাওরে নির্মাণ করা হয় ফসলরক্ষা বাঁধ।

কিন্তু এ বছরে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের বাঁধ নির্মাণ কাজ শতভাগ শেষ করার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বেশিরভাগ বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি। একইসাথে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে স্বেচ্ছাচারিতার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ডিসেম্বরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় এই বাঁধের কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। তবে স্থানীয় কৃষক ও লোকজনের দাবি, এ পর্যন্ত ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনও মাটির কাজই শেষ হয়নি। সঠিক সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ঢলে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বোরো ফসলের ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। তাদের অভিযোগ, হাওরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ্য করা গেছে।

জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে বোরো ফসলের সুরক্ষার জন্য ৭২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) মাধ্যমে ১৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারসহ ৫৩২ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ জন্য সরকার ১১৯ কোটি ৮৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে বাঁধের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। মৌসুম শেষ পর্যায়ে এসেও মাত্র ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ বাঁধে ঘাস লাগানো হয়নি, করা হয়নি দুর্মুজ। ডিজাইন অনুযায়ী বাঁধের স্লোপ দেওয়া হয়নি।

গোড়া থেকে মাটি কেটে অনেক বাঁধ নির্মাণ করায় সেগুলো দুর্বল হয়েছে। এর সবই কৃষকদের উদ্বেগের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওরের গুড়খাই (তুফানখালি) ও বোয়ালিয়া বাঁধে ফসল রক্ষা হয় দিরাই-শাল্লা, খালিয়াজুরি, ইটনা-মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের সীমানা পর্যন্ত বড় বড় হাওরের। বোয়ালিয়া বাঁধ এখনই ধসে গেছে। তুফানখালীর বাঁধে এখনো মাটি পড়ছে।

স্থানীয় রাজাপুর গ্রামের কৃষক ছাত্তার মিয়া বলেন, বাঁধগুলোর কাজ আরও আগে শেষ করা জরুরি ছিল।

একই এলাকার আমিরপুরের কৃষক শামছুল হক বলেন, বোয়ালিয়ায় খুবই দুর্বল বাঁধ হয়েছে। এই বাঁধ ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা আছে। ৪-৫ দিন আগে বাঁধে ধ্বস শুরু হয়েছে। তুফানখালীর বাঁধের মাটি কমপেকশন হতে হতে পানি চলে আসবে।

কেবল তুফানখালী বা বোয়ালিয়া নয় সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার সর্ববৃহৎ নলুয়া হাওরের ফসল রক্ষা বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থানে এখনও মাটিই পড়েনি। ফলে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে।

প্রকল্প কাজের সঙ্গে সম্পৃক্তদের দাবি, কাজের তুলনায় টাকা কম পাওয়া গেছে। সময় মতো অর্থ না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। নলয়া হাওর ঘুরে দেখা যায়, নলুয়ার হাওরের ফোল্ডার-১ এর আওতাধীন ১ নম্বর প্রকল্পে প্রায় ৫০০ মিটার এলাকাজুড়ে এখনও মাটি পড়েনি।

ওই প্রকল্পের তেলিকোণা পাকা সড়কের নিকট থেকে নয়াবাড়ী, নোয়াগাঁও ও কান্দারগাঁও এলাকাসহ প্রায় ৫০০ মিটার স্থানে এখনও মাটি পড়েনি। ৩, ৫, ৬ ও ৭ ও ৮ নম্বর প্রকল্পের বেশকিছু স্থানে মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়নি।

নলুয়া হাওরের এক নম্বর প্রকল্পের সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, মাটি কাটার মেশিন নষ্ট থাকায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তবে দুই তিনদিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি জানান, ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ, টাকা পেয়েছি মাত্র ২৫ ভাগ। নিজের পকেটের টাকা দিয়ে বাঁধের কাজ করছেন বলে জানান তিনি।

একইভাবে সুনামগঞ্জের দোয়ারা উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের ২১টি পিআইসির বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশিরভাগ পিআইসির বাঁধের কাজ এখনও শেষ হয়নি।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, এবার সুরমা ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বেড়ি বাঁধের কাজ ভালো হয়নি। কোনো কোনো ফসলরক্ষা বাঁধের বেশিরভাগ অংশে মাটিই ভরাট হয়নি। বাঁধের দৈর্ঘ, প্রস্থ ও উচ্চতার সঠিকতা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক জানান, সুরমা ইউনিয়নের ২১টি পিআইসির বেড়ি বাঁধের মধ্যে বেশিরভাগ পিআইসি এখলাছুর রহমান ফরাজি ও তার আত্মীয় স্বজনের নামে রয়েছে। সবকিছু সামলে এবারের পিআইসির বেড়িবাঁধ নির্মাণ একই ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকায় বাঁধের কাজ ভালো হয়নি। সুরমা ইউনিয়নের ১ নম্বর পিআইসি এখলাছুর রহমান ফরাজির নামে আছে।

৩ নম্বর পিআইসি এখলাছুর রহমান ফরাজির চাচাতো ভাই সম্পর্কের আত্মীয় মো. আতাউর রহমান ফরাজির নামে, ২৮ নম্বর পিআইসি আপন ভাতিজা মোশারফ হোসেন ফরাজির নামে রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পিআইসি রয়েছে এখলাছুর রহমান ফরাজির তত্ত্বাবধানে।

সুরমা ইউনিয়নের ১ নম্বর পিআইসির সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি বলেন, আমার বাঁধের কাজ শেষ হতে আরও সপ্তাহ-দশদিন লাগবে। একাধিক পিআইসিতে তার স্বজনরা আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার নিজস্ব ট্রাক, ট্রলি ও এক্সেভেটর আছে। আমি বাঁধে মাটি ভরাটের কাজে ব্যবহার করি। এ জন্য অনেকে বলেন, এসব বেড়ি বাঁধ আমার।

৪-৫ বছর পর পর হাওরে চরম বিপর্যয় নেমে আসে। যা গত ২০১৭ সালে হাওর বিপর্যয়ের পর শঙ্কামুক্ত ৪টি বছর কাটিয়েছেন কৃষকেরা। কিন্তু জামালগঞ্জ উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারগুলোতে মাটি ও দুরমুজের কাজ কোনো রকম শেষ হলেও বাকি আছে টেকসইকরণের বস্তা ও বাঁশ পোঁতার কাজ। জামালগঞ্জ উপজেলার বদরপুর থেকে শুরু হওয়া হাওড়িয়া আলীপুর পর্যন্ত বাঁধে এখনও দুরমুজের কাজ শেষ হয়নি।

এ বাঁধের ঘনিয়ার বিল সংলগ্ন নদী তীরবর্তী একাংশে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে নদীর বাঁক খাওয়া মোড় থাকায় ধীরে ধীরে ভাঙন আরও প্রবল আকার ধারণ করতে পারে। তখন ঝুঁকিতে পড়বে বিশাল হালি হাওর। এর বিপরীত পাড়ের শনি হাওরের অপর বাঁধে মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়নি।

ওই বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারটি মাটিতে ভরাট হলেও বাঁশ পোঁতাসহ অন্যসব কাজ বাকি আছে। এ হাওরের ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজার লালুরগোয়ালা ও তার লাগোয়া বাঁধে মাটি ফেলা শেষ হয়েছে, কিন্তু মাটি ড্রেসিং ও দুর্বা লাগানোর কাজ করতে কাউকে দেখা যায়নি।

অন্যদিকে, মামুদপুরের ভাঙা থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত ক্লোজারেও বাকি আছে বাঁশ ও বস্তা ফেলার কাজ। দুর্গাপুরের বিপরীত পাড়ের মহালিয়া হাওরের চারটি পিআইসির মধ্যে দুটিতে কেবল মাটি ফেলা শুরু হয়েছে। ওই ৭ ও ৮ নম্বর পিআইসি সংশ্লিষ্ট কাউকে বাঁধে পাওয়া যায়নি। এ হাওরের অপর ২টি বাঁধের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু মদনাকান্দির বিপরীত পাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ক্লোজারটিতে বাঁধ টেকসইকরণের কাজ এখনও বাকি আছে।

এ অবস্থায় মহালিয়া হাওরটি অরক্ষিত বলে মনে করছেন হাওরের সচেতন মানুষেরা।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গৌরারং ইউনিয়নের কামারটুক গ্রামের পাশে খরচার হাওরপাড়ের ৬ নম্বর পিআইসির নির্মিত বেড়িবাঁধে নানা অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। একেবারে বাঁধের গোড়া ঘেঁষে একাধিক খনতা করে মাটি উত্তোলন করায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এমন অভিযোগ একাধিক কৃষকের।

খরচার হাওরের ৬ নম্বর পিআইসির সভাপতি আবুল বরকত বলেন, বেড়িবাঁধের গোড়া থেকে খনতা করে মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এ ভাবে খনতা করায় বাঁধে কোনো সমস্যা হবে না। ঘাস লাগানো ও দুমুর্জ করার কাজ বাকী রয়েছে।

তবে সবকিছু মিলে ফসলরক্ষা বাঁধের কাজে চরম অবহেলার চিত্র দেখা গেছে। আগামী এক সপ্তাহেও বাকি কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন হাওর পাড়ের মানুষেরা।

বাঁধের কাজে ঢিলেমিতে অসন্তুষ্ট হাওর বাঁচাও আন্দোলনের নেতারাও। তারা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। ফলে এ নিয়ে লাখ লাখ কৃষক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক থাকে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের এক নেতা অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এ বছর পানি শুকিয়েছে দ্রুত। কিন্তু সময়মতো কাজ শেষ হয়নি। হাওর ঘুরে দেখলাম, মহালিয়ার ৭ ও ৮, হালির ১০ ও ১১, পাগনা হাওরের ২৭ ও ৩৩ নম্বর পিআইসিসহ শনি হাওরের একটি বাঁধে এখনও মাটি ফেলার কাজ চলছে। এর মধ্যে অধিক বরাদ্দকৃত ৩৩ নম্বর পিআইসিতে একটু মাটিও পড়েনি। মহালিয়ার ২টি বাঁধে কেবল মাটি ফেলা শুরু হওয়ায় পুরো হাওরটি অরক্ষিত মনে হয়েছে। সিংহভাগ বাঁধে এখনও দুর্বা লাগানো হয়নি এবং দুরমুজ করা হয়নি প্রায় ২০টি বাঁধে। নির্দিষ্ট সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ না হওয়ায় জামালগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ৪টি হাওর নিয়ে আমরা চিন্তিত।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাজেদুল ইসলাম বলেন, হাওরের কাজ আমরা প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছি। প্রথম দফায় কাজ শেষ না হাওয়াতে আগামী ২০ মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে। এই সময়ের বাঁধের কাজ সমাপ্ত করা হবে।

পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, এ পর্যন্ত অনেক বাঁধে মাটির কাজ শেষ হয়নি। মাটি দুরমুজ (কম্পেকশন) ও ঘাস লাগানো হয়েছে আরও কমসংখ্যক বাঁধে। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ৫০ মিটার দূর থেকে বাঁধের মাটি আনার কথা থাকলেও ৩৫ ভাগ ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয়নি।

কাসমির রেজা বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সকল হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখনো বেশিরভাগ বাঁধে মাটির কাজই শেষ হয়নি। এটি খুব দুঃখজনক। ইতোমধ্যে বৃষ্টি বাদল শুরু হয়ে গেছে। দেরিতে বাঁধ নির্মাণ করলে বাঁধের মাটি নরম থাকে। পানির ধাক্কায় সহজে বাঁধ ভেঙে যায়।

সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, ‘মাটি ফেলার কাজ মোটামুটি শেষ। আশা করি, দুই-চার দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ শেষ হবে। কৃষকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বৃষ্টি শুরুর আগেই কাজ শেষ হবে।

এমএসপি

Header Ad

ভারতের বিবৃতি বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি: সংগৃহীত

সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে গ্রেপ্তারের ঘটনা কিছু মহল ভুলভাবে তুলে ধরছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় মঙ্গলবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিকে জানিয়েছে, চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়ার চেতনার পরিপন্থি।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সকল ধর্মের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান যে সম্প্রীতি রয়েছে এবং সরকারের যে অসাম্প্রদায়িকতার প্রতিশ্রুতি ও প্রচেষ্টা রয়েছে ভারতের বিবৃতিতে তা প্রতিফলিত হয়নি। বাংলাদেশে জনগণের ওপর গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি চলে আসছিল তা সমাপ্ত করার বিষয়ে সরকারের যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞা রয়েছে এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুদের একই নজরে দেখার যে দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, ভারতের বিবৃতিতে সে বিষয়টি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে, তা সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে সরকার উল্লেখ করছে যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর কিছু মহল ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ভারতের এ ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধু ভুল তথ্য ছড়ানো নয়, বরং দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব ও বোঝাপড়া চেতনার পরিপন্থি।

বাংলাদেশ সরকার সকল ধর্মের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উল্লেখ্য করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত করছে যে প্রত্যেক বাংলাদেশির তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে, নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা পালন করার বা বাধা ছাড়াই মতামত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। সকল নাগরিকের বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ সরকারের একটি দায়িত্ব। গত মাসে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনের মাধ্যমে এটি আবারও প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকার বিচার বিভাগের উপর হস্তক্ষেপ করে না জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার বিচার বিভাগের কাজে হস্তক্ষেপ করে না। আর চিন্ময় দাসের বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন। সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিবৃতিতে উল্লেখ্য করা হয়, চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। যে কোনো মূল্যে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ বন্দর নগরীতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

Header Ad

আইনজীবী সাইফুল হত্যার বিচারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ মিছিল

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামে সংঘটিত বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদ এবং আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) রাত সোয়া ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।

মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘সাইফুল হত্যার বিচার চাই, করতে হবে করতে হবে’, ‘উকিল মরে আদালতে, এই সরকার কি করে’, ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, উগ্রবাদের ঠাঁই নাই’, ‘উগ্রবাদের আস্তানা,ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

সমাবেশে বক্তারা চট্টগ্রামের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাকে জাতীয় নিরাপত্তা ও বিচার ব্যবস্থার জন্য চরম হুমকি বলে অভিহিত করেন। তারা আইনজীবী সাইফুল ইসলামের নির্মম হত্যাকাণ্ডের দ্রুত এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।

তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশীদ জিতু বলেন, আমরা সম্প্রীতি নিয়ে এদেশে বসবাস করতে চাই। কিন্তু একটি পরাজিত শক্তি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চক্রান্ত করছে। আমার ভাই সাইফুলকে চট্টগ্রামের আদালত চত্বরে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এই হত্যার তীব্র নিন্দা জানাই। যারা বাংলাদেশের সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।

দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী জি এম এম রায়হান কবির বলেন, চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী হামলা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয় বরং এটি মানবতার ওপর আঘাত। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষার্থীরা সবসময় ন্যায় ও মানবতার পক্ষে অবস্থান করেছে। আজকের এই মিছিল তারই উদাহরণ। আমরা কোনো উগ্রবাদী শক্তিকে বাংলাদেশে মাথা তুলতে দেব না।

Header Ad

ইউক্রেনে এক মাসে লন্ডনের অর্ধেকের সমান এলাকা দখল রাশিয়ার

ছবি: সংগৃহীত

ক্রমশ উত্তেজনা বাড়াচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। টানা আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালাচ্ছে রাশিয়া। মাঝে এই যুদ্ধে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেলেও সম্প্রতি হামলা বেশ জোরদার করেছে রাশিয়া।

মূলত ইউক্রেনে এখন আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে রুশ সৈন্যরা। এমনকি গত এক মাসে লন্ডনের অর্ধেকের সমান আয়তনের এলাকা ইউক্রেনের কাছ থেকে দখল করে নিয়েছে রাশিয়া।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ান বাহিনী ২০২২ সালের আক্রমণের প্রথম দিনগুলোর চেয়ে ইউক্রেনে বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে বলে বিশ্লেষক এবং যুদ্ধ ব্লগাররা মঙ্গলবার জানিয়েছেন।

গত মাসে রুশ সৈন্যরা লন্ডনের আয়তনের সমান অর্ধেক এলাকা নিজেদের দখলে নিয়ে গেছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সেনাবাহিনী এর আগে কখনেও এতো দ্রুত ইউক্রেনের অঞ্চলগুলোতে অগ্রসর হয়নি।

মূলত টানা আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিকে সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের একাধিক দেশ।

বিশেষ করে অস্ত্র দেওয়ার পাশাপাশি দেশটিকে ব্যাপকভাবে সামরিক তহবিলও জুগিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন। তবে এরপরও যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। আর এমন অবস্থায় সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য ইউক্রেনকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যম বলছে, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করে সেই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করার অনুমতি দেওয়ার পর চলমান এই যুদ্ধটি সবচেয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে প্রবেশ করেছে।

রাশিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজ গ্রুপ এজেন্টস্টভো এক প্রতিবেদনে বলেছে, “ইউক্রেন-অধিকৃত অঞ্চলের মধ্যে আয়তনের দিক থেকে নতুনভাবে সাপ্তাহিক ও মাসিক রেকর্ড স্থাপন করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার সেনাবাহিনী গত সপ্তাহে ইউক্রেনের প্রায় ২৩৫ বর্গ কিলোমিটার (৯১ বর্গ মাইল) দখল করেছে, যা ২০২৪ সালের জন্য একটি সাপ্তাহিক রেকর্ড।”

এর আগে চলতি বছর জুলাই মাসে রাশিয়া পূর্ব ইউক্রেনে দ্রুত অগ্রসর হতে শুরু করে। ওপেন সোর্স মানচিত্র অনুসারে, এরপর থেকেই রাশিয়ার অগ্রগতি ত্বরান্বিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সর্বাত্মক হামলা শুরু করে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। এরপর থেকে পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে প্রায় ১২ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। আড়াই বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া— চারটি প্রদেশের আংশিক দখল নিয়েছে রুশ বাহিনী।

এই চার প্রদেশের রাশিয়ার দখলে যাওয়া অংশের সম্মিলিত আয়তন ইউক্রেনের মোট ভূখণ্ডের এক-পঞ্চমাংশ। অবশ্য যুদ্ধরত এই দুই দেশের কেউই তাদের নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ না করলেও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হতাহতের সংখ্যা কয়েক লাখ বলে অনুমান করছে।

Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভারতের বিবৃতি বন্ধুত্বের চেতনার পরিপন্থি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
আইনজীবী সাইফুল হত্যার বিচারের দাবিতে জাহাঙ্গীরনগরে বিক্ষোভ মিছিল
ইউক্রেনে এক মাসে লন্ডনের অর্ধেকের সমান এলাকা দখল রাশিয়ার
লেবাননে ইসরায়েলের হামলায় নিহত অন্তত ২২
স্বৈরাচার পালিয়েছে কিন্তু লেজ রেখে গেছে, তারা ষড়যন্ত্র করছে: তারেক রহমান
সহজেই বাংলাদেশকে হারাল উইন্ডিজ
আইনজীবী হত্যায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান
এ আর রহমান আমার বাবার মতো: মোহিনী দে
ইসকন আন্দোলনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সাইম আইয়ুবের বিস্ফোরক সেঞ্চুরিতে সমতায় ফিরলো পাকিস্তান
কে এই চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, তাকে গ্রেপ্তার নিয়ে কেন এত হইচই
ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বেড়েছে দাম
৮০ বছর বয়সেও মডেলিং করবেন রুনা খান
চট্টগ্রামে চিন্ময়ের অনুসারীদের হামলায় আইনজীবী নিহত
গুলিবিদ্ধ হওয়ার ২২ দিন পর নওগাঁ যুবদল নেতার মৃত্যু
ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
চিন্ময় কৃষ্ণকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের বিবৃতি
সম্প্রদায়ের নেতা হিসেবে নয়, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় চিন্ময় গ্রেফতার: আসিফ মাহমুদ
সংবিধানের ৬২ জায়গায় সংশোধনের প্রস্তাব বিএনপির
বঙ্গবন্ধু রেল সেতুতে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন