বাংলায় ডালিম, বেদানা বা আনারের আরবি প্রতিশব্দ ‘রুম্মান’। ডালিমের আদি নিবাস প্রাচীন পারস্য অঞ্চলে। তবে বর্তমানের পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলেই আনার চাষ হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি আনার উৎপন্ন হয় ইরানে। পবিত্র কোরআনের তিন স্থানে রুম্মান বা আনারের আলোচনা এসেছে।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনিই সৃষ্টি করেছেন এমন বাগানসমূহ, যার কিছু মাচায় তোলা হয় আর কিছু তোলা হয় না এবং খেজুরগাছ ও শস্য, যার স্বাদ বিভিন্ন রকম, জয়তুন ও আনার (ডালিম), যার কিছু দেখতে এক রকম আর কিছু ভিন্ন রকম। তোমরা তার ফল থেকে আহার করো, যখন তা ফল দান করে এবং ফল কাটার দিনেই তার হক দিয়ে দাও আর অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত: ১৪১)
এই ফল যে শুধু দুনিয়াতেই মানুষের জন্য নিয়ামত, তা কিন্তু নয়, বরং জান্নাতেও মহান আল্লাহ তাঁর এই নিয়ামত তাঁর জান্নাতি বান্দাদের জন্য রাখবেন। পবিত্র কোরআনে জান্নাতি ফলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, ‘সেখানে আছে ফলমূল, খেজুর ও ডালিম।’ (সুরা : আর-রাহমান, আয়াত: ৬৮)।
তাই সম্ভব হলে, সামর্থ্য থাকলে মাঝেমধ্যে ফল খাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। বিশেষ করে ডালিম ফলের আছে বিশেষ স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন জেনে নেওয়া যাক জান্নাতি ফল ডালিমের কিছু উপকারিতা।
পুষ্টিগুণ:
সুমিষ্ট ফল ডালিমে আছে প্রচুর পুষ্টি। এক কাপ পরিমাণ ডালিমের দানায় পাবেন প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় ৩৬ শতাংশ ভিটামিন কে, ৩০ শতাংশ ভিটামিন সি, ১৬ শতাংশ ভিটামিন বি৯ ও ১২ শতাংশ পটাশিয়াম। তাহলে বুঝতেই পারছেন কেন এই ফল নিয়মিত খাওয়া জরুরি।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে:
সুস্থ থাকার জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। কারণ আমাদের রক্তচাপ বেশি বা কম হয়ে গেলে সেখান থেকে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত ডালিম খেলে তা আপনাকে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। ফলস্বরূপ স্বাভাবিক হবে রক্তচাপ।
রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়ায়:
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে কাজ করে ডালিম। এতে থাকে অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান যা এই কাজে সাহায্য করে। ফলে দূর হয় রক্তশূন্যতাসহ রক্তের অন্যান্য অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ভয়।
ডায়াবেটিসে উপকারী:
মিষ্টি ফল হলেও ডালিম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। বিশেষজ্ঞরা এই ফলকে প্রাকৃতিক ইনসুলিন হিসেবেও বলে থাকেন। তাই ডায়াবেটিস হলেও নিশ্চিন্তে এই ফল খেতে পারবেন। তবে এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খাবার খাওয়া উত্তম।
হাড়ের ব্যথা দূর করে:
যারা হাড়ের ব্যথায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ডালিম খেলে উপকার পাবেন। কারণ ডালিমে থাকা বিভিন্ন উপকারী উপাদান আথ্রাইটিস ও হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা দূর করতে কাজ করে। সেইসঙ্গে এটি হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যথা হলে তাও উপশম করতে সাহায্য করে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়:
হৃদরোগের আশঙ্কা থেকে দূরে থাকতে চাইলে নিয়মিত ডালিম খেতে পারেন। এই ফল আপনার শরীরের কোলস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। এতে দূরে থাকে হৃদরোগের ঝুঁকি।
স্মৃতিশক্তি বাড়ায়:
যারা ভুলে যাওয়ার সমস্যায় ভুগছেন তারা নিয়মিত ডালিম খেলে উপকার পাবেন। কারণ উপকারী এই ফল আপনার স্মৃতিশক্তি বা মনে রাখার ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে। অ্যালঝেইমার্সের রোগীদের জন্য এটি বিশেষ উপকারী ফল। শিশুর খাবারের তালিকায়ও রাখতে পারেন ডালিম।